• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
সমুদ্রের অনিরাপদ অঞ্চলেও গোসলে মত্ত পর্যটকরা

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

সমুদ্রের অনিরাপদ অঞ্চলেও গোসলে মত্ত পর্যটকরা

দুর্ঘটনার আশঙ্কা

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০১৯

ঈদের ছুটিতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করেছেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। ঈদের পরদিন থেকেই বাড়তে শুরু করে পর্যটকের সংখ্যা। গতকাল রোববার রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকতে। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। গোসলের জন্য নির্ধারিত নিরাপদ স্থানের বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেও গোসল করছিলেন হাজার হাজার পর্যটক।

সরেজমিন গিয়ে দায়িত্ব পালনরত লাইফগার্ডকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে গোসল করার জন্য নির্ধারিত নিরাপদ অঞ্চল রয়েছে। এই দুই পয়েন্টের নিরাপদ অঞ্চলকে লাল-হলুদ পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। চিহ্নিত এলাকার বাইরে পুরো সমুদ্রসৈকত গোসলের জন্য অনিরাপদ। কিন্তু পর্যটকরা গোসল করার ক্ষেত্রে নিরাপদ বা অনিরাপদ বিবেচনায় নিচ্ছেন না। তাদের নিবৃত্তও করা যাচ্ছে না। নিরাপদ অঞ্চলে জায়গা না পেয়ে অনিরাপদ জোনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন পর্যটকরা।

সি সেফ লাইফগার্ডের সিনিয়র লাইফগার্ড আদ্রাম ত্রিপুরা জানান, গত শুক্রবার থেকে সৈকতে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রোববার সকাল থেকে পর্যটকের উপস্থিতি পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পর্যন্ত পর্যটকে টইটম্বুর। আনুমানিক ৪ লাখ পর্যটক সৈকতে এসেছেন। বেশির ভাগই গোসল করে সময় পার করছেন। তবে গোসলের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ মানছেন না তারা।

তিনি আরো বলেন, সাগরে বর্তমানে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। ফলে সাগর উত্তাল। এছাড়া পর্যটকদের গোসল করার জন্য দুই পয়েন্টে দুটি নিরাপদ অঞ্চল রয়েছে। সেই নিরাপদ অঞ্চলে জায়গা না পেয়ে পর্যটকরা অনিরাপদ অঞ্চলেও গোসল করছেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিক এবং কলাতলী পয়েন্ট গোসলের জন্য সম্পূর্ণ অনিরাপদ। কিন্তু সেখানেও রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকের উপস্থিতি। পতাকা টাঙিয়ে, মাইকিং করেও নির্দেশনা মানানো যাচ্ছে না তাদের। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। বেশি নিষেধ করলে অনেক পর্যটক লাইফগার্ডদের ওপর চড়াও হতে আসেন।

সমুদ্রসৈকতে আগের মতো এখন লাইফগার্ডকর্মীও নেই। সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করে সি সেফ লাইফগার্ড। তাদের সদস্য সংখ্যা ২৮। তিন পয়েন্টে ৮ জন করে পালাক্রমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। লাবণী পয়েন্টে তদারকির দায়িত্ব পালন করেন ইয়াছির লাইফগার্ডের কয়েকজন কর্মী। এত বিপুলসংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন অল্পসংখ্যক লাইফগার্ডকর্মী।

শনিবার দুপুর ২টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে নিরাপদ অঞ্চলের বাইরে গোসল করা অবস্থায় কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এত মানুষের মধ্যে সতর্ক বা নিরাপদ অঞ্চলের সংকেত চিহ্ন লক্ষ করা যায় না। এছাড়া যেখানে নিরাপদ অঞ্চল দাবি করা হচ্ছে, সেখানে পা ফেলারও জায়গা নেই। তাই তারা বাধ্য হয়ে এখানে গোসল করছেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মিনহাজুল ইসলাম নামের এক পর্যটক জানান, সোমবার সকালে চলে যাব। যা উপভোগ করার আজকের মধ্যেই করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে অনিরাপদ অঞ্চলে গোসল করতে হচ্ছে। তবে আমরা কূলের কাছাকাছি থেকে সতর্কভাবে সাগরে নেমেছি।

বিপুল পরিমাণ পর্যটকের উপস্থিতিতে বালিয়াড়ি আর সমুদ্র একাকার। এই বিপুল পর্যটককে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের দাবি এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচকর্মীরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সমুদ্রসৈকতে সারাক্ষণ অবস্থান করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

তিনি আরো জানান, অনিরাপদ অঞ্চলে গোসল না করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। পানিতে নেমেও সতর্ক করা হচ্ছে। অতি উৎসাহী পর্যটকরা কোনো নির্দেশনা মানছেন না। তবে তারা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে অবস্থান করছেন। তাই এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। দুর্ঘটনা এড়াতে লাইফগার্ড সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

তবে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, গত ৩ দিনে বেশ কয়েকজন পর্যটককে মুমূর্ষু অবস্থায় সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ লাইফগার্ডের সদস্যরা বারণ করেও পর্যটকদের সাগরের অনিরাপদ অঞ্চলে নামা থেকে বিরত রাখতে পারছেন না। তবু আমরা বসে নেই। সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads