• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায় পদ্মাপাড়ের মানুষ

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

স্বপ্নপূরণের অপেক্ষায় পদ্মাপাড়ের মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০১৯

এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর কাজ। কারিগরি জটিলতা না থাকার কারণে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে স্প্যান বসানো, এর সঙ্গে সঙ্গে সড়ক ও রেলের স্ল্যাব বসানোও হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই পূরণ হতে যাচ্ছে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন। উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ সড়ক যোগাযোগ এবং নগরের মতো আধুনিক সেবার সুবিধাসমূহ অপেক্ষা করছে দুই পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য।

সম্প্রতি পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাওয়া-জাজিরা উভয় প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ত্রয়োদশ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় বাঙালির স্বপ্নের সেতুর প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ। জাজিরা পয়েন্টে নদীশাসনের পাশাপাশি সংযোগ সড়ক, ওজন সেতু এবং টোল প্লাজার কাজও শেষ।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে মাওয়া অংশের সংযোগ সড়ক এবং অন্যান্য অংশের কিছু কাজ নিয়ে আরো অল্প কিছু সময় প্রয়োজন হবে। তবে সেটা অনেক বেশি সময়ের ব্যাপার নয় বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা আরো বলেছেন, চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় বাকি কাজ বড় ধরনের জটিলতা ছাড়াই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর কারণে ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া এবং মাদারীপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে। আশপাশে লোকেরাই কাজ করছেন সেতু প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে। আবার দেশের অন্য জেলা থেকে প্রকল্প এলাকার আশপাশে এসে বসবাস শুরু করা কর্মীরাও অবদান রাখছেন এই অর্থনীতিতে। অন্যদিকে প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের কেনাকাটায় ব্যবসা হচ্ছে স্থানীয়দের।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন স্থানীয় যুবক আকরাম গাজী। তিনি যথাযথ চিকিৎসার অভাবে ছোটবেলায় মাকে হারান। তাই পদ্মা সেতু হলে গ্রামের সবাই উন্নত চিকিৎসা পাবেন বলে স্বপ্ন দেখেন এই যুবক। আকরাম বলেন, ছোটবেলায় আম্মারে হারাইছি। একে তো গরিব, তার ওপর এইহানে ভালো কোনো হাসপাতাল আছিল না। মাঝে মাঝে ঢাকা গেলে সেইহানে বড় বড় হাসপাতাল দেখছি। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে কারো অসুখ হলে সেইহানে নিয়ে যাওয়া যাবে। অনেকের উপকার হইবো।

এই সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা গ্রামের বয়সী বাসিন্দা রহমত শেখ। তিনি সেতু প্রকল্পের পাইনপাড়া, করুলী চরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে বিক্রি করেন। চরগুলোতে থাকা প্রায় ২০টি দোকানের মধ্যে তার একটি। পদ্মা সেতুর কারণে নিজেদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের আশা দেখা রহমত শেখ বলেন, নদীর পাড়ে থেকে শুধু নদীর পাড় আর জীবনের ভাঙন দেখেছি। পদ্মা সেতু হলে আমাদের ছেলেমেয়েরা সহজে ঢাকা যেতে পারবে। আবার যারা এখন ঢাকা থাকে, তখন তারা বাড়িতে থেকেও ঢাকার কাজ করতে পারবে। এখন আমরা এখানকার বাজারে আমাদের গাছের কাঁঠাল, আম, কলা এবং অন্যান্য জিনিস বিক্রি করি। পদ্মা সেতু হলে সরাসরি ঢাকা নিয়েও বেচতে পারব।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হারান মণ্ডল। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। সেতু হয়ে গেলে আমাদের কাজের সুযোগ আরো বাড়বে। বিশেষ করে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণে ভিটে-মাটি না ছেড়েই ঢাকা গিয়ে কাজ করতে পারব। আমাদের ছেলেমেয়েরা ঢাকা গিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। আমরা অনেক ধরনের নাগরিক সুবিধা পাব, যা হয়তো এমন মফস্বলে পাওয়া যায় না। সরকার এই এলাকার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং উন্নয়ন করছে তাতে আমাদের জীবন আরো উন্নত হবে।

হারান মণ্ডল আরো বলেন, নদীভাঙনের কারণে এখন আমাদের জমি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কা নেই। আমাদের ঘর-বাড়ির আশপাশে কী সুন্দর এলাকা তৈরি করা হয়েছে! কত সুন্দর আর প্রশস্ত রাস্তা! তাই সেতুর কাজ শেষ হলেই হয়। সেতুর কাজ যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে, আমাদের স্বপ্নপূরণের যাত্রা তত তাড়াতাড়ি শুরু হবে।

এভাবেই পদ্মা সেতু ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন পদ্মাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ তথা বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চল। এখন শুধু সেই স্বপ্নপূরণের অপেক্ষা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads