• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
চরাঞ্চলে সিডিএসপির সফলতা

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

চরাঞ্চলে সিডিএসপির সফলতা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জুন ২০১৯

চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর-এ চার জেলায় জেগে ওঠা উপকূলীয় চরে ভূমিহীন মানুষের বাসস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, নিরাপদ জীবন মান নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৪ সালে চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্প বা সিডিএসপি যাত্রা শুরু করে। সম্প্রতি প্রকল্পটির চারটি ফেজের কাজ শেষ হয়েছে।

সূত্রমতে, উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরে বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৪ হাজার ১৬২টি অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ৪৪ হাজার ৪১০ একর ভূমি বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার ভূমিহীন মানুষের বসবাস ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় এই প্রকল্পটির ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ের সফল ধারাবাহিকতায় চতুর্থ পর্যায়ের কাজও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়। সফল এ প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস সরকার, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি)। প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক বনায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সিডিএসপি-৪ প্রকল্পকে দ্য বেস্ট প্লান্টেশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। একই বছর নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রকল্পটিকে ইফাদ জেন্ডার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সিডিএসপি-৪ ও সিডিএসপি-৫-এর মধ্যে তিন বছর মেয়াদি ‘সিডিএসপি-ব্রিজিং’ প্রকল্প প্রণয়নের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। তিনি বলেন, সমন্বিত উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে সিডিএসপি একটি রোল মডেল। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯৪ হেক্টর এলাকা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পেয়েছে, নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে এবং কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বসবাস ও চাষাবাদের জন্য ভূমি বিতরণ করা হয়েছে।

প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরে প্রকল্পটির অবস্থান। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদী অববাহিকায় এক বিলিয়ন টনের বেশি পলি জমা হয়ে সাগর উপকূলে চরাঞ্চলের সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলে গজিয়ে ওঠা এসব নতুন ভূখণ্ডে দেশের ক্রমবর্ধমান দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে। সমন্বিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে লাখো ভূমিহীন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে নিরলস কাজ চলছে। সরকারের পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও ছয়টি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধান বা লিড এজেন্সি হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটিতে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বিধায় ভবিষ্যতে এমন প্রকল্পে সহযোগিতা করতে উন্নয়ন সহযোগীরা বেশ আগ্রহী।

সামগ্রিক বিষয়ে সিডিএসপির (বাপাউবো অংশ) প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীন অতিদরিদ্র মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ করা হয়েছে। তাদের উন্নত জীবন মান নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং ভূমির ওপর আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী  হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীন অতিদরিদ্র মানুষদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পটি সরাসরি দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্য নিরসনে সহায়তা করায় এ রকম প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাপাউবোর উপ-পরিচালক, জনসংযোগ পরিদপ্তর এসএম হুমায়ূন কবীর জানান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিডিএসপি প্রকল্পে ১৫৮.৭৮ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার নদী পুনঃখননসহ ৪৪৬ কিলোমিটার খাল খনন-পুনঃখনন, ২৪টি রেগুলেটর, ১০টি ক্লোজার এবং ১০টি গাইড ডাইক নির্মাণ করা করেছে। আরো জানা যায়, সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার পাশাপাশি বেশ কিছু এনজিও প্রকল্প এলাকায় তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। তারা প্রকল্প এলাকায় নতুন বসতিতে পুনর্বাসিত দরিদ্র নারী কর্মসংস্থান, হস্তশিল্প, কারুশিল্প, বনায়ন, মৎস্য চাষ, আইন ও মানবাধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা-ইত্যাদিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, যৌথ মালিকানার মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়ন এবং পানি ব্যবস্থাপনা গঠনের মাধ্যমে নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশগত ভারসাম্য এবং চরাঞ্চলের মাটির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রকল্প গ্রহণের শুরুতে বেকার মানুষের কোনো আয় না থাকলেও বর্তমানে তারা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads