• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রসূতির পেটে পাওয়‍া গেল গজ ব্যান্ডেজ

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

প্রসূতির পেটে পাওয়‍া গেল গজ ব্যান্ডেজ

  • চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২২ জুন ২০১৯

চুয়াডাঙ্গার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পর এক প্রসূতির পেট থেকে গজ ব্যান্ডেজ বের হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই প্রসূতি মায়ের নাম পলি খাতুন। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের বিপুল আলীর স্ত্রী।

প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দুজন আনাড়ি ডাক্তার দিয়ে দুই দফায় পলিকে অস্ত্রোপচার করলেও  তিনি সুস্থ হননি। বরং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

যদিও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক গজ ব্যান্ডেজ উদ্ধারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করছেন, গজ ব্যান্ডেজ বের হওয়ার অভিযোগটি হাস্যকর। তবে অভিযোগটি অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল আলম।

প্রসূতি পলি খাতুনের স্বামী বিপুল আলী জানান, জীবনে প্রথম সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দে বিভোর ছিলেন। সন্তান প্রসবের বেদনা উঠলে স্ত্রী পলিকে ভর্তি করানো হয় চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল এলাকার বেসরকারি মা ক্লিনিকে। গত ২০ মে ভর্তির পর বিকালে ডা. লিফা নারগিস চৈতী অস্ত্রোপচার করেন পলিকে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পলি খাতুন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান প্রসব করেন। সন্তান প্রসবের চার দিন পর ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠান রোগীকে।

প্রসূতির মা আসমা খাতুন জানান, ক্লিনিক থেকে বাড়িতে যাওয়ার কয়েক দিন পর পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। পেট ফুলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পলি। তাকে  ফের ওই ক্লিনিকে নিয়ে এলে আবার অস্ত্রোপচার করানো হয়। অস্ত্রোপচার করেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়।

প্রসূতি পলি খাতুনের দাবি, দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের সময় আমার পেট থেকে বের হয় গজ ব্যান্ডেজ ও সুতা। এ সময় আমি চিকিৎসকের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানান, বাচ্চার শরীরের ময়লা ছিল একটু। পরিষ্কার করে সেলাই করে দিয়েছি, এখন আর কোনো সমস্যা নেই।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালট্যান্ট ওয়ালিউর রহমান নয়ন এ প্রসঙ্গে বলেন, পেটে গজ ব্যান্ডেজ থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে রোগীর পেটের সেলাইয়ের স্থানে ইনফেকশন হয়েছে। ক্ষতের মাত্রাটি একটু বেশি। তাছাড়া রোগীর শরীরে রক্ত কম। আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছি। রোগীর সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে।

এ ব্যাপারে মা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমানের দাবি, কোনো ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটেনি। অস্ত্রোপচার সফল ছিল। রোগীর অ্যাজমা সমস্যা ছিল। এ কারণে অতিরিক্ত হাঁচি ও কাশিতে রোগীর পেটের সেলাই কেটে গিয়েছিল। আমরা পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তা ঠিক করে দিয়েছি।

অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ডা. লিফা নারছিস চৈতীও এমনটিই দাবি করেন। তিনি জানান, রোগীর পেট থেকে গজ ব্যান্ডেজ থাকার বিষয়টি মিথ্যা ও হাস্যকর।

স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, গত এক বছরে মা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা অন্তত ৬ জন রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা উদ্বেগজনক। ক্লিনিকটির রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ গত বছরে শেষ হলেও নবায়ন করা হয়নি। ১০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও ক্লিনিকটিতে শয্যা রয়েছে ২৪টি। এত কিছুর পরও ক্লিনিকটি কীভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads