• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ভূরুঙ্গামারীতে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় গরু

ফাইল ছবি

সারা দেশ

সিন্ডিকেট নিলামে বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ভূরুঙ্গামারীতে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় গরু

  • ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৯

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় গরু।এসব গরু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিলামে বেচা-কেনা হচ্ছে।হুন্ডির মাধ্যমে হচ্ছে অর্থ লেনদেন। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, কাস্টমস কর্মকর্তা ও বিজিবির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ রয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, করিডোর ব্যবস্থা না থাকার পরেও প্রতিদিন উপজেলার ধলডাঙ্গা, শালঝোড়, পাথরডুবি, ময়দান, দিয়াডাঙ্গা, ভাওয়ালকুড়ি ও বাগভান্ডার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসছে। পাচারকালে বিজিবি সীমান্তে এসব গরু আটক করতে না পারলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে মাঝে মধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি থেকে কিছু কিছু ভারতীয় গরু আটক করে। অপর দিকে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকেই ভারতীয় গরু আটক করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আটক গরু বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশ ও বিজিবি ছাড়াও কয়েকজন ব্যক্তিকে প্রত্যেক হাটবারে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে গরু আটক করতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষ তাদের পরিচয় জানে না।

অনুসন্ধান ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই বাগভান্ডার বিজিবি ক্যাম্পে সাতটি বড় গরু ৫ লাখ টাকা সিজার মূল্য নির্ধারণ করে নিলামে তোলা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। গরুগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আব্দুর রউফ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। অপরদিকে দিয়াডাঙ্গা ও ময়দান বিজিবি ক্যাম্পে ১৮টি গরু ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা সিজার মূল্য নির্ধারণ করে নিলামে তোলা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা। যা দুই ব্যক্তির নিকট মাত্র ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া ২৯ জুন ধলডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পে ১৭টি বাছুর নিলামে বিক্রি করা হয়।  যার সিজার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৩০ হাজার  টাকা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মামুন ২ লাখ ২০ হাজার  টাকায় গরুগুলো নিলামে কিনে নেন। পরে ক্যাম্পের রাস্তাতেই স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীর কাছে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ভাওয়ালকুড়ি বিজিবি ক্যাম্পে ২৮ জুন ১৬টি বাছুর গরু নিলামে বিক্রি করা হয়। সিজার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ টাকা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রোকন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫’শ টাকায় নিলামে গরুগুলো কেনেন। পরেই গরুগুলো ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায় গরু ব্যবসায়ী মকবুলের নিকট বিক্রি করেন।

নিলাম আয়োজনকারী প্যান্ট হাউজ, রংপুর নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ কোনো রকম প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই গোপনে নিলাম কার্য সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি একজন কাস্টমস কর্মকর্তা নিলাম কার্যক্রমে আসার পর থেকে কিছু অসাধু বিজিবি সদস্যের যোগসাজসে সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত গরু ব্যবসায়ীরা নিলামের অংশ গ্রহণ করতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে দুইটি সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা গরু প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা নেন।

অভিযোগ সম্পর্কে জয়মনিরহাট সহকারী কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিজিবির পক্ষ থেকে নিলাম সম্পর্কে ক্যাম্প এলাকায় মাইকিং করা হয়। নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হচ্ছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এছাড়া নিরাপত্তার অভাবে সীমান্তবর্তী বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে অনেকেই নিলামে অংশ গ্রহণের সাহস পান না। এতে বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে সিন্ডিকেটকারীরা। সচেতন মহলের দাবি বিষয়টি সম্পর্কে সরেজমিন তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এখাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads