• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
‘গুলি করব, বুুলেট সাংবাদিক চেনে না’

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

‘গুলি করব, বুুলেট সাংবাদিক চেনে না’

  • কুবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২১ জুলাই ২০১৯

ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল এবং মো. রাইহান ওরফে জিসান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মরত সাংবাদিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি ও লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হত্যার হুমকি দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শুক্রবার পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব হাসান হিমেল সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে কেন এসেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।

এসময় উপস্থিত সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল পুনরায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘গুলি করব, বুলেট সাংবাদিক চেনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারব।’ এসময় তার সঙ্গে থাকা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাইহান ওরফে জিসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য সদলবলে তেড়ে আসেন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ শাখার সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

তবে সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, ‘আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কালকে কোনো অস্ত্র ছিল না।’ আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসানকে ফোন দেওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।

এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন হিমেল। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হিমেল ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০২ নং কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবনে মেতে থাকেন। হলে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হিমেল তার অনুসারীদের নিয়ে নিয়মিত আসর বসান। তার কক্ষের সামনে দিয়ে হাঁটলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়।’ এদিকে এ ছাত্রলীগ নেতা গত ১০ এপ্রিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সিনিয়র এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন এবং তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ নিয়ে ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে ‘অজানা’ কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসান গভীর রাতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নাম্বার কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে আসর বসান। কয়েক মাস আগে অতিরিক্ত মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে তাকে। হলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া এ নেতা গত সপ্তাহে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে ‘মইরা গেলে কবরে গিয়া হইলেও দুইডা কোপ দিয়া আসমু’ বলে হুমকি দেন। জানা যায়, দুই হলের মাদকের ছড়াছড়িতে এই দুই নেতার যোগসাজশসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত এ দুই ছাত্রলীগ নেতার বিষয়ে সিনিয়র এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হিমেল আর জিসান নিয়মিতই মাদকে আসক্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন করে দুই হলে মাদকের সাম্রাজ্য খুলে বসেছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, সাংবাদিকদের হুমকি বা লাঞ্ছিত করলে তাদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া ছাত্রলীগের আদর্শবিরোধী। মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পরও সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যারা অছাত্রসুলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নেব। শুধু প্রক্টর হিসেবে নয়; শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads