• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবার

সন্ত্রাসী হামলায় আহত মাদ্রাসা ছাত্রী ও তাদের পরিত্যক্ত বাড়ি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবার

  • কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৯

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মাদ্রাসা ছাত্রীর পরিবার। প্রথমে ৩০ জুন ও ১৬ জুলাই এবং সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় পরিবারটি। প্রথম হামলার পর থেকে পুরো পরিবার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের সৈয়দুর রহমানের সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ির মনাফ মিয়ার পরিবারের লোকজনের সাথে বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জের ধরে সৈয়দুর রহমানের মেয়ে স্থানীয় চাউরউলী জামেয়া সুন্নিয়া মাদরাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্রী হাজেরা বেগম (১৪) কে গত ৩০ জুন মাদ্রাসা যাওয়ার পথে পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে মনাফ মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন ওরফে রুপুল।

এঘটনায় হাজেরার বাবা সৈয়দুর রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ রুহুলকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। গুরুতর আহত হাজেরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এদিকে মামলা করায় রাহুলের পরিবার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় ঘরবাড়ি ছেড়ে সৈয়দুর স্ত্রী সন্তান নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন।

এদিকে গত ৮ জুলাই জামিনে মুক্ত হয়ে রুহুল। গত ১৬ জুলাই সকালে হাজেরার মা ফাতেমা বেগম (৫২) সন্তানদের স্কুলের বই নিতে আসেন বাড়িতে। এসময় তার ৭ বছরের ছোট ছেলে সাথে ছিলো। বাড়ির সামনে আসার পর রুহুল ও তার পিতা মনাফ মিয়াসহ পরিবারের লোকজন একত্রিত হয়ে ফাতেমা বেগমের ওপর হামলা চালান। এসময় রুহুল ও তার পরিবারের লোকজন ঘরের পেছনের দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে ফাতেমাকে মারধর করে।

সরেজমিনে টিলাগাঁও ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামে গেলে মাদরাসা ছাত্রী হাজেরার ঘরের দরজায় তালা ঝুলতে দেখ যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, মাসখানেক ধরে ঘরবাড়ি ছাড়া তারা। হাজেরার বাবা মা ও ছোট ভাই পার্শ্ববর্তী রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের চাউরউলী গ্রামে তার ফাতেমা বেগমের বড় বোন রহিমা বেগমের বাড়িতে থাকেন।

ফাতেমা বেগম জানান, আমার স্বামী রুহুলকে আসামী করে থানায় মামলা দিলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম এবং বাড়িতে আমার বড় মেয়ে ও ছোট ছেলে থাকতো। মামলা দেয়ায় রুহুলের বাবা মনাফ মিয়া, চাচা সায়েদ মিয়াসহ সবাই ফোনে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিতে থাকে। প্রাণের ভয়ে বাড়িতে থাকা আমার স্বামী সন্তানরা আমার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এদিকে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আসে রুহুল। ঢাকায় চাকুরিরত আমার বড় ছেলে আজাদকে সে ফোনে হুমকি দিতে থাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। যদি মামলা তুলে না নেই তাহলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। জেলের বাইরে থাকায় রুহুল প্রকাশ্যে আমাদের ঘরবাড়িতে ঢুকতে দেয় না ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন জানান, আমাকে তারা কেউ কিছু বলেনি। শুনেছি চেয়ারম্যান সাহেব এব্যাপারে উভয়পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

টিলাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক জানান, আমি দু’পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে বসেছি। মাদরাসা ছাত্রীর ওপর হামলার ঘটনার বিষয়টি আইনী ক্রিয়াধীন। তবে ওই ছাত্রীর মায়ের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘর ছেড়ে থাকার বিষয়টি অমানবিক। আজ সোমবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এলাকায় গিয়ে তাদের বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করবো। কেউ যদি বাড়িতে না থাকে, তাহলে তাকে জোর করে রাখা যাবে না। তারা বাড়ি ছেড়েছে প্রতিপক্ষের হুমকির চেয়ে তাদের ইচ্ছাতেই।

অভিযুক্ত রুহুল আমিন জানান, আগে বিরোধ ছিলো। এখন কোন সমস্যা নেই। তারাই সমস্যা সৃস্টি করে এখন ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। কেউ তাদের হুমকি

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দিদার উলল্যা জানান, মামলার বাদিরা একেকসময় একধরণের বক্তব্য দেন। ছাত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগ নিয়েছি। পরে আবার অভিযোগ পরিবর্তন করে। পরবর্তী মামলার অভিযোগ একাধিকবার দিয়েছে। আমরা একাধিক অভিযোগ সংযুক্ত করে নিয়ে মামলা রেকর্ড করেছি।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান জানান, এ ব্যাপারে থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। ওইছাত্রীর পরিবারে যদি কোন ধরনের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads