• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
৮০ টাকার ভাড়া ৩০০

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

৮০ টাকার ভাড়া ৩০০

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ আগস্ট ২০১৯

আলী হোসেন যাবেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। রাজধানীর গাবতলী থেকে এই রুটের ভাড়া এমনিতে ৮০ টাকা। কিন্তু ঈদের আগে আগে তিনগুণেরও বেশি ভাড়া চাইছেন বাসশ্রমিকরা।

আলী বলেন, ‘এই রুটের বাস চালানো হচ্ছে পাটুরিয়া রুটে। আর যে কয়টি বাস আছে, তাও ভাড়া চাচ্ছে প্রায় তিনগুণ। হরিরামপুরের ভাড়া ৮০ টাকা। কিন্তু এখন ভাড়া চাচ্ছে তিনশ টাকা। আর গাড়িও কম। এই রাস্তার গাড়ি চালাচ্ছে পাটুরিয়ার দিকে। ওই রাস্তায় ভাড়া বেশি।’

হরিরামপুর রুটের শুকতারা পরিবহন ও ভিলেজ পরিবহন বর্তমানে চলাচল করছে পাটুরিয়া ফেরিঘাট রুটে। ভাড়া ৩০০ টাকা। ফলে পাটুরিয়া রুটের যাত্রীরা বাস পেলেও ভোগান্তি বাড়ছি অন্য রুটগুলোতে।

এটি কেবল একটি রুটের চিত্র না। ঈদের আগে আগে প্রতিবার বাস ভাড়া যেভাবে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়, এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসার সময় ফাঁকা আসতে হয়। আবার যানজটের কারণে জ্বালানি খরচ বেশি হয়। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের বোনাস দিতে হয়। তাই এমনিতে ভাড়া বেশি মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে মালিকপক্ষেরও খুব বেশি লাভ হয় এমন নয়।

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ। যাত্রীর তুলনায় নেই পর্যাপ্ত বাস। আগাম টিকিট নিয়েছেন এমন যাত্রীরা বাস পাচ্ছেন, কিন্তু যারা আগে থেকে টিকিট নেননি তাদের বাস পেতে সমস্যা হচ্ছে। কোনো রুটে বাস এলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। আর পরিবহন শ্রমিকরা আগেই চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছেন ভাড়া বেশি।

কেবল গাবতলী টার্মিনাল নয়, রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী টার্মিনালেরও একই চিত্র। আগাম টিকিট যারা কেটে রেখেছিলেন, তারা বাদে বাকি সবাইকে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি দেওয়ার শর্ত মেনেই উঠতে হচ্ছে বাসে।

সায়েদাবাদ থেকে নোয়াখালীগামী যাত্রী আরিফ ইসলাম জানান, আল বারাকা পরিবহনের হিমালয় এক্সপ্রেসে নোয়াখালীর ভাড়া এমনিতে ৩০০ টাকা। কিন্তু মালামালসহ তার কাছ থেকে রাখা হয়েছে এক হাজার ৩০০ টাকা। রসিদসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে তিনি অনলাইনে একটি অভিযোগও জমা দিয়েছেন।

একই রুটের লাল সবুজ পরিবহনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সাতশ টাকা আর নন-এসিতে ছয়শ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া যথাক্রমে চারশ ও তিনশ টাকা।

রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে টাঙ্গাইল সদরের ভাড়া বাসভেদে এক থেকে দেড়শ টাকা। ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটে চলা বিকাশ পরিবহনের লক্কড়ঝক্কড় একটি বাসের চালকের সহকারী ভাড়া হাঁকছিল ‘টাঙ্গাইল, পাঁচশ’, ‘টাঙ্গাইল পাঁচশ’ বলে।

অতিরিক্ত ভাড়া দিতে মনে মনে আপত্তি থাকলেও কিছু করার নেই জেনে তা সয়েই বাড়ি যাচ্ছেন হাজারো যাত্রী। কেউ কেউ অবশ্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একজন যাত্রী পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো আশ্বাস বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঈদের তিন দিন বাকি থাকলেও কার্যত ছুটি শুরু হয়ে গেছে।  রোববার থেকে তিন দিন ঈদের ছুটি। আর আগের শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ দলে দলে।

শুক্রবার সকাল থেকে গাবতলী, মহাখালী টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। আর অপেক্ষমাণ এসব যাত্রী অধিকাংশই দেশের উত্তরবঙ্গমুখী।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টার্মিনালে এলেই বাস পাওয়া যাবে। এমন ধারণা থেকে তারা আগাম টিকিট নেননি। আর তারাই এই অতিরিক্ত ভাড়ার খপ্পরে পড়ছেন।

আবার আব্দুল হামিদ নামের একজন যাত্রী জানান, ঢাকা ছাড়তে বেলা ১২টা থেকে তিনি গাবতলী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ঢাকা থেকে বগুড়ামুখী কোনো বাস পাচ্ছেন না। এখন আর কত ভাড়া নেবে, সে চিন্তা করছেন না। বলেন, ‘ভাড়া যাই হোক, বাড়ি যাব-এটাই গুরুত্বপূর্ণ’।

‘অগ্রিম টিকিট নেই, কারণ ভাবলাম কাউন্টারের এলেই টিকিট বা বাস পাওয়া যাবে। এমন তো পাচ্ছি না।’

একইভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন নূর হোসেন। বলেন, ‘প্রতিবছরই তো যাই। আগেভাগে কখনোই টিকিট কাটি না। এবার কে জানে কী হইল। গাড়িই নাই।’

রাজবাড়ী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আড়ং বলেন, ‘যাত্রী যারা আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই আগে টিকিট কেটে গেছে। অগ্রিম টিকিটের যাত্রী এখন বেশি, টিকিট ছাড়া কম।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads