• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আর বাড়বে না!

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

সারা দেশে ৫ জনের মৃত্যু

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আর বাড়বে না!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০১৯

রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

গতকাল সোমবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার নিম্নগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা আশা করছি, রোগীর সংখ্যা আর বাড়বে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডেঙ্গুবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান, অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তার সানিয়া তহমিনা আরো বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এ সময় বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫০ জন। এই ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৫৭ জন এবং ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬ জন। ঢাকার বাইরে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৮৫৮ জন এবং ছাড়পত্র নিয়েছেন ১ হাজার ৪৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক ডা. তহমিনা বলেন, আগের দিনের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে।

তিনি জানান, সারা দেশে আজ (গতকাল) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৭৩৩ জন, যা আগের দিনের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। ঢাকা মহানগরীর হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ভর্তি থাকা রোগী সংখ্যা ৩ হাজার ৪১৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছে ৩ হাজার ৩১৪ জন। আগের দিনের তুলনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ কমেছে।

ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, এর মাধ্যমেই আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমছে অর্থাৎ রোগীর হারে নিম্নগতি। আশা করছি এটা আর বাড়বে না। এটা সম্ভব হয়েছে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় এবং আপামর মানুষ সচেতন হয়েছে বলে।

তিনি জানান, আজ (গতকাল) সকালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব হাসপাতালের ডিরেক্টর, লাইন ডিরেক্টরদের উপস্থিতিতে, সিভিল সার্জন ও ইউএইচএসপিএদের সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ে এর প্রতিকার, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুর শহরতলির হাটচন্দ্রা গ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত রাজু নামের এক কৃষক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর বৃষ্টি নামে এক গার্মেন্টকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

মৃত রাজুর পরিবার জানিয়েছে, গত শনিবার জ্বর নিয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলে পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। হাসপাতালে রাজুর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত রোববার দুপুরে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে দেওয়ানগঞ্জের বৃষ্টি (২০) নামে এক গার্মেন্টকর্মী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে শনিবার রাতে বাড়ি ফেরার পর রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মিজানুর রহমান (৪০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৭টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এস এম আবদুর রাজ্জাক বলেন, সোমবার পর্যন্ত ৫৭৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৮৯ জন। এদের মধ্যে ২০ জন সোমবার ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত খুলনায় একজন বৃদ্ধাসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গত জুলাই থেকে আগস্টের ১৯ তারিখ পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলায় ৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সদর হাসপাতালে ১১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জেলায় ৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন। ৩০ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

যশোর প্রতিনিধি জানান, যশোরে এখনো বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরো ৪২ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯২ জন। এ পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ৬৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, ব‌রিশাল শের-ই-বাংলা মে‌ডি‌কেল কলেজ হাসপাতা‌লে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আবারো কিছুটা বে‌ড়ে‌ছে। গতকাল সোমবার সকালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মোট ১৮৯ জন, যা গত রোববার ছিল ১৮৬ জন।

দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর দুমকিতে সুমাইয়া আক্তার (১৭) নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা গেছে। সুমাইয়া দুমকি সরকারি জনতা কলেজের সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) মো. ফজলুল হকের মেয়ে। সে এবার ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজধানী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিং করছিল। তার গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল এলাকায়।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ভর্তির সংখ্যা এখনো বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৫৫ জন রোগী ভর্তি হলেও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৩ জন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩২ জন। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন বিলগাথুয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী চালন বেগম (৩৫) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। চালন বেগম ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করতেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads