• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
গোদাগাড়ীতে বেপরোয়া এনজিওর সুদের কারবার

সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় কার্যক্রম পরিচালনাকারী এনজিও মাতৃছায়া

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

গোদাগাড়ীতে বেপরোয়া এনজিওর সুদের কারবার

  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০১৯

সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে ভরে গেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। সমাজসেবা বা সমবায় দফতর থেকে নিবন্ধন নিয়ে ভুইফোড়ের মত এনজিও খুলে ক্ষুদ্রঋণের নামে চলছে সুদের কারবার। এমনকি অনেকের নিবন্ধন পর্যন্ত নাই। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে চালিয়ে যাচ্ছে এনজিওর কার্যক্রম।

বেশির ভাগই গজিয়ে উঠেছে সমবায়ের নিবন্ধন নিয়ে। গজিয়ে ওঠা এইসব এনজিও প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে টাকা ধার দিয়ে সুদের ব্যবসা করা।

আগে গ্রাম্য মহাজনেরা সুদের ব্যবসা করত। এখন এনজিওর নামে চলছে সুদের ব্যবসা করছে। গোদাগাড়ী উপজেলার অসংখ্য এনজিও সুদের জমজমাট ব্যবসা করছে প্রকাশ্যে। ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এই ব্যবসা। সমাজসেবার নিবন্ধন নেই এমন অনেক সংস্থাও চালিয়ে যাচ্ছে সুদের ব্যবসা।

গোদাগাড়ী উপজেলার বালিয়াঘাটা এলাকায় অবস্থিত মাতৃছায়া নামের একটি এনজিওর প্রধান কার্যালয়। সেখানে গিয়ে পরিচালক আব্দুল আলিমের সাথে কথা বলে জানা যায়, সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে ২০১৮ ইং সাল থেকে তারা কার্যক্রম চালু করেছে। বর্তমানে এই উপজেলার রাইহী এলাকায় একটি শাখা অফিস খুলেছে। ২ টি অফিস থেকেই তারা ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন আছে কিনা জানতে চাইলে পরিচালক আব্দুল আলিম বলেন, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। এখনো নিবন্ধন পাইনি। শাখা অফিস খুলা ও ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম চালাতে পারেন কি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যানও এনজিও গুলো যে ভাবে চালাচ্ছে আমিও সেই ভাবে চালাচ্ছি।

চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা ঘেঁসে গোদাগাড়ী উপজেলা হওয়ায় চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার সমাজসেবা ও সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে অনেক এনজিও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শাখা অফিস খুলে চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় সুদের ব্যবসা।

সংস্থা গুলো বিভিন্ন কৌশলে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ না থাকার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বদলে ঘটছে উল্টো ঘটনা। চলছে এনজিও মালিকদের বেপরোয়া সুদের কারবার। বিশেষ করে নিবন্ধন নেবার সময় সমাজ কল্যাণকে লিখিতভাবে বলে থাকে তারা ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করবে না। একই সংস্থা জয়েন্ট স্টক এ্যাক্সচেঞ্জ বা অন্য কোন মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন নিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্ববিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করার ভূমিকা নেই সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের। যথাযথ আইন ও লোকবলের অভাবে তদারকি সম্ভব হচ্ছেনা বলে বলেন উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর। তাদের ভাষ্য হচ্ছে কোন এনজিও ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করলে তাদের শাস্তি পেতে হবে। প্রশাসনের নজর এড়াতেই স্বেচ্ছাশ্রমের নামে আলাদা সংস্থার কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়ে এনজিওগুলো মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।

বিভিন্ন এনজিওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ কাজ করছে না। নামে-বেনামে গজিয়ে উঠা এসব সংস্থা বিভিন্ন সময় গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে বিশেষ কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও ব্যাংকের ফাঁকা চেক নিয়ে বা ৩৫০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত নিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে চালিয়ে যাচ্ছে সুদের কারবার।

এনজিওর মালিকেরা চাকরি দেবার নামেও হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। মাঠ কর্মিদের নিয়োগ দেওয়ার সময় জামানত হিসাবে মাঠ কর্মিদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

তাদের পরিচালিত কার্যক্রম ক্ষুদ্রঋণের আওতায় প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কিস্তি আদায় করা। বিধবা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা খুবই গরিব মহিলাকে টার্গেট করে ক্ষুদ্রঋণের নামে টাকা ধার দিয়ে অধিক সুদে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি আদায় করে। একমাস কিস্তি দিতে না পারলে সেই টাকা সুদে আসলে দ্বিগুন হয়ে যায়। এইভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুরো উপজেলায় গরিব অসহায় নারী এই ক্ষুদ্রঋণের আওতায় থেকে কিস্তির নামে সুদ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্ত রাশেদুর জামানের সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তিনার কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads