বহুল আলোচিত জাকিয়া সুলতানা রুপা হত্যার দুই বছর আজ। জীবদ্দশায় আসামিদের রায় কার্যকর দেখতে চান নৃশংসভাবে নিহত রুপার মা ও তার স্বজনরা।
রবিবার সকালে তাড়াশ প্রেসক্লাবের সামনে বুকে কালো ব্যাচ ধারন করে আসামিদের দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন করে এ দাবী জানান। মানবন্ধনের সময় ব্যানারে তাঁর মেয়ে রুপার ছবি দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বিলাপ করতে থাকেন।
রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রেুয়ারি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর গত ১৯ মাসেও চাঞ্চল্যকর এ মামলার শুনানি শুরু হয়নি। নিম্ন আদালতে দ্রুততম সময়ে মামলার রায় ঘোষণায় আমরা সন্তুষ্ট হয়েছিলাম। তবে উচ্চ আদালতে আসামি পক্ষের আপিলের পর মামলাটি গত দেড় বছর ঝুলে থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছি।
তিনি আরো জানান, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি পরিবারকে দেওয়ার যে আদেশ আদালত দিয়েছেন, তাও কার্যকর করা হয়নি। বিচারের সর্বশেষ পর্যায়ে যেতে কতদিন সময় লাগবে জানা নেই। ততদিনে হয়তো বাসটি ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করতে হবে। এতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশাও ক্ষীণ।
রুপার বয়োবৃদ্ধ মা হাসনাহেনা বেগম বলেন, রূপা স্বপ্ন দেখতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন বড় চাকুরী করবে। পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু মানুষরূপী নরপিশাচরা সে স্বপ্ন পুরণ হতে দেয়নি। এসময় তিনি মেয়ে হত্যকারীদের দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবী জানান। যেন জীবদ্দশায় মেয়ের হত্যাকারী শাস্তি দেখে যেতে পারেন। রুপার মায়ের সাথে মানববন্ধনে আরও অংশ নেয় রুপার ছোট ভাই উজ্জল হোসেন ও তার স্ত্রী টুম্পা খাতুন।
প্রসঙ্গত-২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মৃত জেলহাজ প্রামানিকের মেয়ে রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। রুপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রুপাকে সনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, সুপারভাইজার সফর আলী, সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের কাছে তারা রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। ২৯ আগস্ট বাসের ৩ সহকারী শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ৩১ আগস্ট রুপার লাশ উত্তোলন করে তার ভাইয়ের কাছে হস্তান্তরর করা হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের তাঁরাশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া সাক্ষ্য প্রমান শেষে আসামী হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) রহমানকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। এছাড়াও বাসের সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদদেন্ডর পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দকৃত ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি রূপার পরিবারকে সাতদিনের মধ্যে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।