• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

পর্যাপ্ত ইলিশ, ক্রেতার মুখে রুপালি আভা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ আগস্ট ২০১৯

এক কেজির কিছুটা বেশি ওজনের এক হালি ইলিশ তিন হাজার ৮০০ টাকায় কিনেছেন ফরিদুল ইসলাম। এরপর তিনি যখন বাজারের পাশে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে তার প্রতিক্রিয়া অন্য কাউকে বলছিলেন, সেটা কোনো কিছু জয় করার থেকে কম নয়। খুবই উচ্ছ্বসিত ও প্রাণবন্ত মনে হচ্ছিল তাকে।

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে ফরিদুল বলেন, প্রতিদিন এ পথে (কারওয়ান বাজার হয়ে) অফিস থেকে ফিরি। শুনেছিলাম এখানে (কারওয়ান বাজারের পাইকারি মাছের আড়তে) সকালে পাইকারি দরে ইলিশ কেনা যায়। তাই ছুটির দিন (গতকাল শুক্রবার) ফজরের নামাজ পড়ে এখানে এসেছিলাম। মনমতো দামে ইলিশ কিনতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। দাম তুলনামূলক অন্য বাজারের থেকে কম।

ওই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ বাড়ায় গত এক সপ্তাহ থেকেই কমছে ইলিশের দাম। এখন যে দামে ইলিশ মিলছে, সেটা এ বছরের সর্বনিম্ন দরও বলা চলে। এতে বাজারে যারাই আসছে, তাদের অনাগোনা এখন ইলিশের দোকানেই। কেউ কিনছেন, কেউ বা আরো কম দামে পেলে ব্যাগ ভরে কিনবেন। সবমিলে সরগরম এখন ইলিশের বাজার। এতে কমে এসেছে অন্য মাছের দামও।

শুধু বাজার নয়, পাড়া-মহল্লার অলিগলিতেও এখন ভ্রাম্যমাণ ইলিশ বিক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ফেরি করে বিক্রি করায় এসব বিক্রেতার কাছে ইলিশের দামও বাজারের খুচরা দামের থেকে কিছুটা কম। তবে সেসব কিনে মান নিয়ে অভিযোগ করছেন কিছু ক্রেতা। তবে বেশির ভাগই খুশি।

অন্যদিকে গতকাল রাজধানীর অন্য কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশের দাম কমেছে। বাজারে ছোট আকারের ইলিশ ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মিলছে হাজার টাকার মধ্যে। সপ্তাহ ব্যবধানে যা কেজিপ্রতি ২০০ টাকা কম। তবে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ কম থাকায় সেসব মাছের দাম তুলনামূলক বেশি। সবমিলে থেকে ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের সরবরাহ সবচেয়ে বেশি থাকায় এসবের দর প্রতি হালি ২ হাজার টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর আধা কেজি ওজনের ইলিশের হালি ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এর চেয়ে কম ওজনের ইলিশ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে।

ইলিশের প্রধান মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস আসন্ন। ফলে বিক্রেতারা বাজারে ইলিশের সরবরাহ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন। তেমনটা হলে আরো কমে আসতে পারে রুপালি মাছের দর। যদিও গত দুই বছর ইলিশের প্রাচুর্যে কিছুটা ভিন্নতা ছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে ততটা বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়নি রুপালি এ মাছের। সেটা হয়েছিল প্রাকৃতিক কারণে।

এদিকে মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি বলেন, এখন ইলিশের কোনো কমতি নেই। সবখানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আসছে। গত বছর ৫ লাখ টনের কিছু বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পরিমাণটা এখনো চূড়ান্ত নয়। এ বছরও ইলিশের উৎপাদন একই ধারায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের জাতীয় এ মাছের উৎপাদনে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে ২০০৭ সাল থেকে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ৯০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার টনে। অর্থাৎ ওই সময় আট বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। কয়েক বছর ধরেই উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কম দামে ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ইলিশের সরবরাহের এ দাপটে দীর্ঘদিন পরে কমে এসেছে অন্য মাছের দামও। এখন প্রতি কেজি মাছ ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমে মিলছে। গতকাল ওইসব বাজারে চাষের রুই কাতলা বা মৃগেলের মতো মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর দেশি হলে সেটার দাম আর কিছুটা বেশি। অন্যদিকে প্রকারভেদে ছোট মাছের দামও কমেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads