• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অন্তঃসত্ত্বা আয়ার পেটে লাথি মারল হাসপাতালের মালিক

অন্তঃসত্ত্বা আয়া নাসরিন আক্তার (২২)

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

অন্তঃসত্ত্বা আয়ার পেটে লাথি মারল হাসপাতালের মালিক

  • শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গাজীপুরের শ্রীপুরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা আয়া নাসরিন আক্তার (২২) সজোরে পেটে লাথি মারেন হাসপাতালের মালিক।

গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার মাওনা আলহেরা হাসপাতালে অমানবিক ঘটনাটি ঘটে।

আয়া নাসরিন আক্তার সাড়ে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে তিনি জানান। তিনি বলেন হাসপাতালের মালিক ডা. আবুল হোসেন তার পেটে লাথি মারেন। এ সময় ভয়ে সুবর্না নামে আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী টয়লেটে ঢুকে পড়ে। ওই সময় হাসপাতালের অন্য কর্মীরা ছুটে গিয়ে তাকে রক্ষা করেছে।

পত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল সাতটার দিকে কর্মস্থলে গিয়েই কাজে লেগে পড়েন আয়া নাসরিন আক্তার (২২)। কাজও করেন দ্রুতই। আগে থেকেই অন্য সহযোগী কাজ একটু এগিয়ে রেখেছিল। তাই অল্প কাজ সহজে শেষ করে একটু বিশ্রামের করছিলেন। এতেই যত দোষ। এ দোষের কারণে হাসপাতালটির মালিক ওই আয়াকে সজোরে লাথি মারেন পেটে।

এদিকে ঘটনাটি প্রকাশ করায় অসুস্থ ওই নারী কর্মীসহ স্বজনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে হাসপাতালের মালিক ও তার সহযোগীরা।

পরে বাসায় ফিরে বিকালে ব্যথা শুরু হলে স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে কোনো সমস্যা নেই বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তাদের হাসপাতালের কর্মকর্তারা। এ ঘটনা কাউকে না জানাতেও বলা হয়েছে।

স্বজনরা জানায়, নাসরিন আক্তারের গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার ভাদুরীপাড়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম কামরুল ইসলাম। স্বামীকে নিয়ে নাসরিন ওই হাসপাতাল থেকে কয়েকশ গজ দূরে কেওয়া পশ্চিমখ- (প্রশিকামোড়) এলাকার জসিম উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তাঁর স্বামী একজন দিনমজুর।

নাসরিন আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালের তৃতীয়তলার ফ্লোর মুছছিলেন তিনি। হঠাৎ তার মাথা ঘুরছিল। কাজ সেরে ওই ফ্লোরেই বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসেছিলেন তিনি। তার বসে থাকা দেখেই ছুটে যান ডা. আবুল হোসেন। এসময় তাকে অশ্লীল গালাগাল করে সজোরে তার পেটে লাথি মারেন ডা. আবুল হোসেন। ‘অ-মাগো’ বলেই পড়ে যান তিনি। এরপর আবারো লাথি মারার জন্য উদ্যত হলে অন্য কর্মীরা ছুটে গিয়ে তাকে রক্ষা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী কর্মচারি জানান, স্যারের স্বভাবই এমন। একটুতেই ওনার পা চলে। এর আগেও একাধিক নারী কর্মীকে লাথি মেরেছেন। নারী কর্মীরা তাঁর ভয়ে তটস্থ থাকে সবসময়। অন্য স্যারেরাও কিছু বলতে পারে না। চাকরির ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পাননা।

নাসরিনের স্বামী কামরুল ইসলাম জানান তার দিনমজুরির টাকায় সংসার চলছিল না। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীকে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই হাসপাতালে আয়ার কাজে চাকরি নিয়ে দেন। পরে সাড়ে চার হাজার টাকা মাসিক বেতনে আয়ার চাকরি হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও তিনি কাজ করছিলেন। কিন্তু চাকরির চারদিন না যেতেই হাসপাতালের মালিক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

তিনি আরো জানান ঘটনাটি অনেকে জেনে যাওয়ায় ডা. আবুল হোসেন আরো ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তাকেসহ তার স্ত্রীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে ডা. আবুল হোসেনসহ সহযোগীরা। ওই দিন বিকালে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কেলে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে জোর কওের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তাদের।

এ ঘটনা জানতে হাসপাতালে গেলে ডা. আবুল হোসেনের সাংবাদিকদের বসিয়ে রেখে পরে কথা বলবেন বলে চলে যান। আর দেখা করেননি। পরে অনেকবার চেষ্ঠা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক মো. হাসান আহম্মেদ বলেন আমাদের ক্লিনিকে ২৫-২৬ জন আয়া আছেন। ‘নাসরিন নামের কোনো আয়া আছে আমার জানা নাই। আর ঘটনাটি অসত্য, সাজানো ও বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনা এ হাসপাতালে ঘটেনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads