• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

যুবলীগের সেই ‘ক্যাশিয়ার’ আনিসও লাপাত্তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ের একসময়কার পিয়ন থেকে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক বনে যাওয়া কাজী আনিসুর রহমানও এখন লাপাত্তা। যুবলীগ নেতাকর্মীদের কাছে ‘ক্যাশিয়ার আনিস’ নামে পরিচিত এই নেতার অবস্থান সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। পুলিশ তাকে নজরদারিতে রেখেছে বললেও কার্যত তাকে গ্রেপ্তারে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। তিনি মূলত ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন।

দুর্নীতি-মাদকবিরোধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন আলোচিত ‘যুবলীগের ক্যাশিয়ার’ কাজী আনিস।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যখন আনিসের চাকরি হয়, তখন তিনি নেতাদের ফুট ফরমায়েস শোনার পাশাপাশি কম্পিউটার অপারেটরের কাজও করতেন। এই সুবাদে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কার্যালয়ে আসা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও সখ্য হয় তার। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা নেতাদের নজরেও চলে আসেন আনিস।

তিনিই এখন ঢাকায় একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর আনুকল্যে রাতারাতি জীবনধারা বদলে গেছে তার। কোটিপতি আনিস এখন ওমর ফারুক ছাড়া কাউকে পরোয়া করেন না।

যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সারা দেশে যেসব কমিটি দিত, সেগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে দিতেন আনিস। টাইপ করতে গিয়ে কোন জেলায় কে সভাপতি কে সম্পাদক তা নখদর্পণে চলে আসে আনিসের। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যেকোনো কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। আবার জেলাপর্যায়ের নেতারাও কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের তথ্য বা সিদ্ধান্ত জানতে তাকে ফোন করতেন। এভাবে জেলা নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্য হয়ে যায়।

২০১২ সালে যুবলীগের কমিটি হলে আনিস পেয়ে যান উপ-দপ্তর সম্পাদকের পদ। শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ থাকায় ছয় মাস পর খালি থাকা দপ্তর সম্পাদক পদে পদোন্নতিও পেয়ে যান তিনি।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসকে সবাই ‘ক্যাশিয়ার’ বলেই চেনে। তবে গত এক যুগে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছু যুবলীগ নেতার সব ধরনের অপকর্মেরও সঙ্গী এই আনিস।

একটি সূত্র জানিয়েছে, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে আনিসের। তবে ওই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সড়কের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে থাকেন কাজী আনিস। ওই ফ্ল্যাটটিও তার নিজের।

শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জে আনিসের রয়েছে বিপুল স্থাবর সম্পত্তি। আগে পাঁচ-ছয় বিঘা জমি ছিল তাদের। গত চার বছরে আরো কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। বাড়ি করেছেন, পেট্রল পাম্প এবং তার পাশের জমি কিনেছেন। এর মধ্যে পেট্রল পাম্পটি কিনতে কোটি টাকা লেগেছে আনিসের। পাশেই ৫ একর জমি আছে তার কেনা। এছাড়া ঢাকায় আনিসের তিনটি বাড়ি আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন ও যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদবাণিজ্য করেই বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন কাজী আনিস। যুবলীগ নেতারা জানান, আনিসের দাপটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে টেকা দায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা অভিযোগ করেন, আনিসের বিরুদ্ধে কথা বলে টেকা কঠিন। বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর সম্মেলন না করে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব আহ্বায়ক কমিটি বানানো ও দীর্ঘদিন বহাল থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন আনিস। আনিসের দাপটে পুরোনো অনেক নেতা যুবলীগে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।

নেতাকর্মীরা জানান, জি কে শামীম, খালেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়েন আনিস। তার সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্লাবে জুয়ার আসর চালানোসহ সব অপকর্মে জড়িত। চাঁদার টাকা সংগ্রহ এবং বিভিন্ন মহলে পৌঁছানোর কাজ করেন যুবলীগে ‘ক্যাশিয়ার’ নামে পরিচিত এই আনিসুর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads