মামলা ও জব্দ করেও পুলিশ ঠেকাতে পারছে না হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার। রাজধানীর অধিকাংশ গাড়িতে এখনো ব্যবহার হচ্ছে তা। এমনকি হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি ও বিক্রি বন্ধ হয়নি। হর্ন না বাজানোর হাইকোর্টের নির্দেশেও কেউ গা করছে না। সড়কে বেপরোয়া হর্ন বাজানো চলছেই। হাইকোর্টের নির্দেশের পর তোড়জোড় চললেও এখন অভিযান চলে ঢিমেতালে।
এসব নিয়ে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার মানুষ শব্দদূষণে আক্রান্ত। জানা যায়, দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ ভুগছেন শ্রবণশক্তির সমস্যায়। এর বড় কারণ শব্দদূষণ। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি ও বিক্রির বন্ধ ঠেকাতে প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার তাগিদ পরিবেশবাদীদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দে চিরতরে নষ্ট হতে পারে শ্রবণ শক্তি। অথচ ঢাকার কিছু এলাকায় এর মাত্রা ১৩০ ডেসিবেল। পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, আইনের প্রয়োগ না থাকা ও দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর গাফিলতিতে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।
রাজধানীতে কত শতাংশ গাড়ি হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছে তার সঠিক তথ্য নেই কারো কাছে। সম্প্রতি এয়ারপোর্ট রোড ও তেজগাঁওয়ে একাধিক যানবাহনে তল্লাশি চালায় ট্রাফিক পুলিশ। রাইদা, বিকাশ, বনশ্রীসহ বিভিন্ন কোম্পানির ১১টি বাস ও ট্রাকের ৮টিতেই মেলে হাইড্রোলিক হর্ন।
অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এখনো দেদার বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ হাইড্রোলিক হর্ন। বাংলামটর, নবাবপুর, ধোলাইখালে গাড়ির যন্ত্রাংশের দোকানগুলোতে হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি হচ্ছে।
হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রির ব্যাপারে গাবতলীর জিল্লুর মোটরসের মালিক বলেন, দোকানে রাখা হর্নগুলো পুরনো। নতুন করে কোনো হর্ন উঠানো হয়নি। কেউ হর্ন চাইলে আগে থেকেই মজুতকৃত হর্নগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিএমপির তথ্যমতে, গত তিন বছরে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের দায়ে মামলা হয়েছে ৮৪ হাজার ৮২০টি গাড়ির বিরুদ্ধে। ট্রাফিক বিভাগ বলেছে, জরিমানা মাত্র একশ টাকা হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন আদালত। পুলিশ এবং বিআরটিএকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ মানছে না কেউ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে সাময়িক নষ্ট হয় শ্রবণশক্তি, ১০০ ডেসিবেলে তা নষ্ট হতে পারে চিরতরে। অথচ ঢাকায় শব্দের গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের বেশি।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, ঢাকার ৭০ পয়েন্টে দিনে শব্দের মাত্রা ৯৯ দশমিক ৬ থেকে ১৩০ দশমিক ২ ডেসিবেল। রাতে ৪৩ দশমিক ৭ থেকে ৬৫ দশমিক ৭ ডেসিবেল। তীব্র এই শব্দদূষণে শ্রবণশক্তির সমস্যায় ভুগছেন দেশের অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে, নির্ধারণ করে দেওয়া আছে শব্দের মানমাত্রা। তবে এর প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ করছেন পরিবেশবাদীরা। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০১৫ সালে ৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের অর্থ ব্যয় হয়েছে শুধু প্রচার ও সচেতনতা তৈরিতে। গাড়ির হর্ন ছাড়াও মাইক, নির্মাণকাজ, কলকারখানা থেকে হচ্ছে শব্দদূষণ। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনোই উদ্যোগ না নিলে রয়েছে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (উত্তর) প্রবীর কুমার সরকার বলেন, হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ট্রাফিক পুলিশ। তারা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। মামলা দেওয়ার পাশাপাশি হর্ন জব্দও করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। শুধু হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি বন্ধ হলে এ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।