• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

অকাল বন্যা

চার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

  • কানু সান্যাল, পাবনা  
  • প্রকাশিত ০৯ অক্টোবর ২০১৯

অকাল বন্যায় পাবনায় ৩টি উপজেলার ৪ হাজার ৬৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে- ধান, আগাম শীতের সবজি, মাষকলাই ও কলা। পদ্মা নদীর পানি কমলেও এখনো বিস্তীর্ণ জমির ফসল তলিয়ে আছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে আট কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ দাবি করেছে।

পাবনা জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ১৯৯৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা হয়নি পাবনায়। অকাল বন্যায় পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী এবং সুজানগর উপজেলার কৃষক। এসব এলাকার আবাদকৃত বোনা আমন ধান, পেঁয়াজ, কলা, মাষকলাই, পেঁপে, গাজর, মুলা, মরিচ, কলা ও বেগুনসহ বিভিন্ন শাকসবজির জমি ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ফসলের জমি থেকে কমপক্ষে ৩২ হাজার টন ফসল উৎপাদন হতো।

কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ১২১৫ হেক্টর জমির কলা, ১২৫০ হেক্টর জমির আগাম শীতের সবজি, ১৫০০ হেক্টর জমির মাষকলাই এবং ১০০ হেক্টর জমির বোনা আমন বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফসল রোপণের পরামর্শ দিয়ে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এ ক্ষেত্রে কৃষকদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।

এদিকে, সুজানগর ও সদর উপজেলার পদ্মার চরে রোপণ করা আগাম পেঁয়াজেরও ক্ষতির কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। চরাঞ্চলের জমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কৃষক মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করতে পারছেন না। এতে করে নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ রোপণ ও উত্তোলন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মৌসুম ধরতে না পারায় ফলন নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।

সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, আমাদের উপজেলার প্রধান ফসল হলো পেঁয়াজ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আগাম শীতের ফসল। বন্যার পানির কারণে এ বছর পেঁয়াজ বুনতেই পারছি না। যারা আগাম বুনেছিল সবারই ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের চর কুড়ুলিয়া গ্রামের কৃষক আনসার আলী জানান, চরের জমি বর্গা নিয়ে ধারদেনা করে তিন বিঘা জমিতে গাজর, ধনেপাতা আর শিম বুনেছিলাম। আগাম শীতের সবজিতে লাভ বেশি তাই খরচ বেশি, বিনিয়োগও বেশি করতে হয়। কিন্তু এ বছর সব ফসল বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেব দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক আজাহার আলী জানান, অকাল বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তবে, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি শীতের সবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো এসব ফসল চাষ করে কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। এসব ফসলের বীজ যেন কৃষক স্বল্পমূল্যে সহজেই পান, সে ব্যাপারে বীজ ডিলার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজ রোপণের ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হলেও, বন্যার পরে পলি মিশ্রিত জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হবে। পরবর্তী সময়ে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে না পড়লে একটু দেরিতে হলেও কৃষক পেঁয়াজের ভালো ফলন পাবে।

পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, এখন পর্যন্ত সরকারি সহযোগিতার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না পেলেও, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে সরকার কোনো প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা দিলে তা যেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকই পান সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির মধ্য দিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির সামগ্রিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads