• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

যুবককে মলমূত্র খাওয়াল প্রভাবশালীরা!

  • বরিশাল ব্যুরো
  • প্রকাশিত ০৯ অক্টোবর ২০১৯

বরিশালের হিজলায় তেল ব্যবসায়ী এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর মুখে মলমূত্র ঢেলে দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায় যুবকটির পেছন থেকে হাত-পা বেঁধে বুকের ওপর পা চেপে ধরে মলমূত্র খাওয়ানো হচ্ছে। যুবকটি অনেক চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। হিজলার হরিনাথপুর তালতলা জামে মসজিদ রোড নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনা নিয়ে গত ক’দিন ধরেই পুরো হিজলা উপজেলায় তোলপাড় চলছে। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ইতঃপূর্বে জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নির্যাতনের শিকার ওই যুবক হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর বাজারসংলগ্ন টমুচরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন বেপারীর ছেলে আজম বেপারী (২৫)। হরিনাথপুর লঞ্চঘাটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী।

এ ছাড়া তাকে যারা নির্যাতন করেছে তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি হলেন একই এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক সিকদারের ছেলে ও হরিনাথপুর লঞ্চঘাটের সুপারভাইজার মাহবুব সিকদার। তার নেতৃত্বেই ওই যুবককে নির্যাতন ও মল-মূত্র খাওয়ানো হয়েছে।

ওই ঘটনার পর থেকেই আজম বেপারী নামের ওই যুবকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও তার পরিবারের দাবি আজম ঘটনার পরে তাবলিগ জামায়াতে গেছে। তবে এ বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, আজম বেপারীকে হাত-পা বেঁধে রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। তার চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ৭-৮ জন লোক। এর মধ্যে একজন আজমের বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া অপর একজন ব্যক্তি আজমের পা এবং অন্য একজন ব্যক্তি তার মাথা মাটির সঙ্গে চেপে ধরে আছে। একটু পরেই বুকের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি মলমূত্র নিয়ে তা জোর করে আজমের মুখে ঢালার চেষ্টা করছেন। তখন আজম অনেক অনুনয়-বিনয় এবং ধস্তাধস্তি করেও তাদের থেকে রক্ষা পায়নি। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে কিছু লোক ওই ঘটনা উপভোগ করলেও কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। আর পুরো ঘটনাটি পাশ থেকে দাঁড়িয়ে কেউ একজন মোবাইল ফোনে ভিডিও করে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঝাড়-ফুকের কাজ করে বলে অপবাদ দিয়ে আজম নামের ওই তেল ব্যবসায়ী যুবককে এমন মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে মাহবুব ও তার লোকজন। এমনকি ঘটনার পরে ওই যুবক লোকলজ্জায় মোবাইল ফোন বন্ধ করে তাবলিগ জামায়াতে চলে যায়। তবে সে কোথায় আছে সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে খবর পেয়ে হিজলার হরিনাথপুর শাওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) তারেক আহসান রাসেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি ঘটনাটি এড়িয়ে যান।

তবে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ফাঁড়ি ইনচার্জ (পরিদর্শক) তারেক আহসান রাসেল এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানেন না দাবি করেন। পরে অবশ্য বলেন, আমি রাতেই (গত সোমবার) ঘটনাটি শুনেছি। তবে ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি আমার জানা নেই। সেটি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ঘটনা আমি শুনেছি। রাতেই স্থানীয়দের মাধ্যমে এ বিষয়ে আমার কাছে খবর আসে। তবে এখন পর্যন্ত ভিডিওটি দেখিনি। থানা পুলিশকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলবেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads