• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বুদ্ধের বাণী দিয়ে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেছেন সত্যপ্রিয় মহাথের

রামুতে পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি‘

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

বুদ্ধের বাণী দিয়ে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেছেন সত্যপ্রিয় মহাথের

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৯ অক্টোবর ২০১৯

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথোর শুধু ভগবান বুদ্ধের বাণী দিয়ে মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করেননি, তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, সব সম্প্রদায়ের প্রতি মমতাবোধ দেখিয়ে মানুষকে রক্ষা করেছেন। তিনি জীবদ্দশায় মানুষের জন্য যা করেছেন, তার কর্মের কারণে আজ সর্বস্তরের মানুষের এত শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে।

আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার প্রাঙ্গনে প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রয়াত বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

একুশে পদকে ভূষিত বাংলাদেশী বৌদ্ধদের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ও বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার প্রাক্তন সভাপতি, উপসংঘরাজ প্রয়াত পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের। বিকালে প্রয়াত ধর্মীয় গুরু পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পেটিকাবদ্ধ করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য, জীবের জন্য, ধর্মের জন্য কি করেননি তিনি? আজ তাঁর কর্মই তাঁকে এই আসনে উপনীত করেছে। মৃত্যূর পরে মানুষের এত ভালোবাসা-শ্রদ্ধা কয়জনে পায়। আজ প্রয়াত এ ধর্মীয় গুরুকে একবার দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শ্রদ্ধেয় গুরু ভান্তে পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের একজন ধর্মীয় গুরুই ছিলেননা, তাঁর মৃত্যুতে বৌদ্ধ সমাজ একজন বড় অভিভাবককে হারালো। এই শূণ্যতা কোন দিনও পূরণ হবার নয়।

ধর্মসভায় উপ-সংঘরাজ ধর্মপ্রিয় মহাথের প্রধান ধর্মদেশক ও উপ-সংঘরাজ শীলানন্দ মহাথের, অধ্যাপক ধর্মরক্ষিত মহাথের, এস ধর্মপাল মহাথের, ড. জিনবোধি মহাথের, বাংলাদেশ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ মহাথের, প্রিয়রতœ মহাথের ও বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, শীলপ্রিয় ভিক্ষু সহ প্রাজ্ঞ ভিক্ষুসংঘ ধর্মদেশক হিসাবে বক্তব্য রাখেন।

পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের’র মহাপ্রয়ানে আয়োজিত স্মৃতিচারণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, সমাজ কল্যান প্রতিমন্ত্রী মো. শরিফ আহমেদ, সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক এমপি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, সহকারি পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম আদিব, ইউএসটিসি’র উপচার্জ প্রফেসর ডা. প্রভাত রঞ্জন বড়–য়া, ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. মুজিবুর রহমান, বান্দরবানের পৌর মেয়র মো. ইসলাম বেবী, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দানবীর রাখাল চন্দ্র বড়–য়া, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষন বড়ুয়া, রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) চাইথোয়াইহ্লা চৌধূরী, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নির্বাহী সভাপতি অশোক কুমার বুড়য়া, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল খায়ের প্রমুখ।

প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু, অধ্যাপক পরীক্ষিৎ বড়–য়া ও অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে রামু সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হক, রামু কেন্দ্রীয় সীমাবিহার পরিচালনা কমিটির নির্বাহী সভাপতি তরুণ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া, তপন বড়–য়া, বিজন বড়–য়া, দুলাল বড়–য়া, পলক বড়–য়া আপ্পু, রূপায়ন বড়–য়া, শিপন বড়–য়া, লিটন বড়–য়া মেম্বার, লিমন বড়–য়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রাজ্ঞ ভিক্ষুসংঘ, প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সহ হাজারো বৌদ্ধ নরনারীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে বুধবার (৯ অক্টোবর) বিহার প্রাঙ্গনে মহাসংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ধর্মসভা, অতিথি ভোজন, স্মৃতিচারণ সভা এবং সত্যপ্রিয় মহাথেরোর প্রায় দুই শতাধিক ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানের আয়োজন করে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার পরিচালনা কমিটি। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে দেশের অন্তত ৩০ হাজার বৌদ্ধ নরনারী ও দর্শণার্থী অংশ নেন।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ-ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংঘিক ব্যক্তিত্ব, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ, পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথেরো (৯১) গত ৩ অক্টোবর দিনগত রাত পৌনে একটার দিকে ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরলোক গমন করেন।

জানা গেছে, ১৯৩০ সালের ১০ জুন কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন সত্যপ্রিয় মহাথের। ১৯৫০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে বিধু ভূষন বড়ুয়া বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে উপসম্পদা গ্রহণ করে সত্যপ্রিয় নাম ধারণ করেন। এরপর তাঁর গুরু ভান্তে আর্য্যবংশ মহাথের’র সঙ্গে তিনি উখিয়া উপজেলার ভালুকিয়া বৈজয়ন্তি বিবেকারাম বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করেন। পরে ওই বিহারের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন পন্ডিত সত্যপ্রিয়। সেখান থেকে কয়েক বছর পর পড়াশুনার জন্য মির্জাপুর পালি কলেজে চলে যান। ১৯৫৪ সালে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য মিয়ানমারে চলে যান। প্রায় ১০ বছর পর ১৯৬৪ সালে মিয়ানমার থেকে ফিরে রামু সীমা বিহারে অবস্থান গ্রহন করেন। দীর্ঘ ৭০ বছরের ভিক্ষু জীবনে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ২০১৫ সালে সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রয়াত এই বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু একুশে পদক লাভ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads