• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
যমুনায় অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন

যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কালিপুর, গোপালগঞ্জ ও জেলেপাড়া থেকে তোলা ছবি

প্রতিনিধি

সারা দেশ

যমুনায় অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন

  • ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ অক্টোবর ২০১৯

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে পুলিশ কে ম্যানেজ করে প্রশাসনের চোখ কে ফাঁকি দিয়ে যমুনা নদীতে দিনের আলোতেই অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, আশ্বিনের পূর্ণিমার ৪ দিন পূর্বে এবং কার্তিকের পূর্ণিমার পর থেকে ১৮ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ০৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মা ইলিশ ধরা, বিক্রি এবং পরিবহণ করা নিষেধ। ইলিশ মূলত লোনা পানির মাছ হলেও তারা এই সময়ে উজানে মিঠা পানিতে ডিম ছাড়তে আসে। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ যমুনা নদীতে বিচরণের কারণে সে সুযোগে অসাধু জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আহরণ করছে মা ইলিশ। এ সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় উৎসবে মেতেছে জেলেরা। এদিকে, উপজেলা মৎস্য অফিস, ভূমি কর্মকর্তা, পুলিশ এ বিষয়টি এড়িয়ে বলছেন, যমুনা নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধে তারা নিয়মিত মনিটিং করছে। অভিযানে ৪ দফায় ১৮ জন জেলেকে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানাসহ সেই সাথে ১ লক্ষ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল উদ্ধার করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

যমুনা তীরবর্তী বসবাসরত বাসিন্দারা বলছে, প্রতিদিনই নদীতে জেলেদের ইলিশ ধরতে দেখা যায়। পুলিশের দেখা পেলে গোপনে টাকার বিনিময়ে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। পুনরায় চলে মাছ ধরা। নৌকাতেই চলে ইলিশ বেচাকেনা।

গতকাল শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্য ৪টি ইউনিয়ন নদী বিধৌত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেতুু উত্তর যমুনা নদীর অংশে গোপালগঞ্জ থেকে শুরু করে জয়পুর, কালিপুর, রেহাই চন্দনী, রুলীপাড়া, রেহাইগাবসারা, ডিগ্রিচর, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, কুঠিবয়ড়া, ভদ্রশিমুল, শুশুয়া, গোবিন্দপুর এসব এলাকায় জেলেরা ছোট ছোট ইঞ্জিল চালিত নৌকা নিয়ে মাঝ নদীতে মা ইলিশ ধরতে ব্যস্ত জেলেরা। কেউ কারেন্ট জাল নদীতে ফাঁদ পেতেছে, কেউ প্রশাসন কে নজরদারি করছে আবার কেউ কেউ পুলিশের খোঁজ খবর নিচ্ছে। এভাবেই সকলের আড়ালে ইলিশ ধরছে তারা। অন্যদিকে, গত শুক্রবার যমুনা নদীতে সাংবাদিকদের পুলিশ ভেবে জেলেরা তাদের ব্যবহৃত নৌ-যান নিয়ে দ্রুত গতিতে পালানোর চেষ্টা করলে একপর্যায়ে কালিপুর চরের মাঝ নদীতে প্রতিবেদক টিম তাদের পিছু নিলে নৌকাটি তীরে ভিড়িয়ে তারা দৌঁড়ে কাঁশবনে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিবেদক টিম ঘটনাস্থল থেকে একটি ইঞ্জিল চালিত নৌকা, মাছ ধরার কারেন্ট উদ্ধার করে থানা পুলিশ কে জানালে ভূঞাপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আল-আমীনের কাছে হস্থান্তর করতে বলা হয়।

অবৈধভাবে মা ইলিশ ধরা গোপালগঞ্জপাড়া গ্রামের জেলে বানিজ ও কাদের মিয়া বলেন, আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে যমুনা নদীতে আর ইলিশ পাওয়া যাবে না। তাই প্রশাসন কে ফাঁকি দিয়ে কারেন্ট জাল ফাঁদ পেতে মাছ ধরছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইলিশ ধরার সময় পুলিশ আসলে তাদেরকে কয়েক হাজার টাকা দিলেই তারা ছেড়ে দেয়।

জেলে শাহীন বলেন, ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। কিন্তু আমরা হতদরিদ্র জেলে পরিবাররা মাছ ধরতে না পারলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে দিনযাপন করতে হবে। তাই পেটের দায়ে নদীতে ইলিশ ধরতে যাই। প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে জেলেরা বলেন, প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমরা জেলে পরিবাররা এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।

এদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এ উপজেলার ১১’শ ৭৬ জন নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে ইতিমধ্যে ২’শ ৯৫ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাউল প্রদান করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দ না থাকায় অন্যান্য জেলেদের সহযোগিতা করতে পারেনি। আরো বলেন, যমুনায় মা ইলিশ বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসলাম হোসাইন বলেন, এ মৌসুমে আমরা এ পর্যন্ত কয়েক দফায় ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে মৎস্য অফিসের নারী কর্মচারীসহ ১৮ জনকে বিভিন্ন অংকে জরিমানা করাসহ ১ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয় এবং জব্দকৃত কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ কেজি ইলিশ। পরে ইলিশগুলো এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।

অপরদিকে, অবৈধভাবে জেলেরা ইলিশ ধরা সময়ে অভিযানের নামে পুলিশের হয়রানি ও আটক করে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, সিভিল পোশাকে থানার কোনো পুলিশ অভিযান করেনি। অন্য কোনো মানুষ সিভিলে ভুয়া পুলিশ সেজে এসব কাজ করতে পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে যদি কোনো সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পাই তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাসরীন পারভীন বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধে প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে অসাধু অনেক জেলেকে অর্থদন্ড করা হয়েছে। আর যদি কোনো জেলে অবৈধভাবে মাছ ধরে তা প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads