• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
দুমকিতে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত অর্ধশতাধিক পরিবার

উপজেলা জলিশা আবাসন পল্লীতে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত অর্ধশতাধিক ছিন্নমূল পরিবারের দিন কাটে অনাহারে অর্ধাহারে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

সংস্কার বিহীন জড়াজীর্ণ আবাসন

দুমকিতে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত অর্ধশতাধিক পরিবার

  • দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৯

মরিচা পড়া টিনের চালের অসংখ্য ছিদ্রে বৃষ্টির পানিতে কাঁথা-কম্বল ভিজে যায়। টিনের বেড়াও মরিচা ধরে ভেঙ্গে ফাঁকা হয়ে গেছে। নেই পয়‍ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। বাথরুম-টয়লেট গুলো ব্যবহরের উপায় নেই। টিউবওয়েলের প্লাটফর্ম ভেঙ্গে লক্কর-ঝক্কর অবস্থায় বসবাসের অনুপযোগী এমন অমানবিক পরিবেশেই বসবাস করছেন জলিশা আবাসন প্রকল্পের অর্ধশতাধিক ছিন্নমূল পরিবারের বাসিন্দারা। এক কথায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন উপজেলা কদমতলা বাজার সংলগ্ন জলিশা আবাসন পল্লী পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের এমন করুণ চিত্র দেখা গেছে।

আবাসন ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম খলিফা জানান, ২০০৮ সালে ৫.৫ একর সরকারি খাস জমিতে জলিশা আবাসন প্রকল্প তৈরী করে সরকার। ১২টি ব্লকে নির্মিত প্রতিটি শেটে ১০টি করে ঘরে মোট ১শ’২০ পরিবারের বসবাসের ঘর রয়েছে। এ আবাসন পল্লীতে আংগারিয়া ইউনিয়নে ১শ’১১টি ছিন্নমূল পরিবারের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। মাত্র ৯টি ঘর বরাদ্দের অপেক্ষায় শূণ্য ছিল। ২০১২ সালের জানুয়ারীতে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৮নং ব্লকের ৭/৮টি ঘড় পুড়ে যায়। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ৮ পরিবারসহ মোট ২৩ পরিবারের লোকজন বসবাসের উপায় না থাকায় অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে জরাজীর্ণ আবাসন পল্লীতে ৮০ পরিবার বসবাস করছে।

আবাসন পল্লীর ৫নং ব্লকের ১নং বাসার আবু কালাম ও পপি দম্পতি জানায়, অভাবের সংসার, মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না। অন্যের বাড়িতে কাজ-কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। ২০০৮সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম মর্তুজা বাসাটি বরাদ্দ দিলে এখানে বসবাস করছি। পপি বেগম বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আমাদের দ্যাখে না। ভিজিডি, ভিজিএফসহ সরকারী কোন ধরণের সাহায্য সহযোগীতা পাই না। স্বামী আবু কালাম মানুষের কাজ করে। কাজ না করলে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ জোটাতে হিমশিম খেতে হয়। তার পড়েও মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে খুশিই ছিলাম। কিন্তু বাসার বেড়া ও চালের টিন নস্ট হয়ে বড় বড় ফুটো হয়েছে। বৃষ্টি হলে ভিজে যায়। অতিকষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ঘর মেরামত করা দরকার কিন্ত মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই।

১নং ব্লকের ৪নং বাসার বাসিন্দা নাসিমা বেগমের স্বামী খবির সর্দ্দার পেশায় একজন ভ্যান চালক। দিন আনে দিন খায় অবস্থা। নাসিমা বেগম জানান, স্বামীর সামান্য আয়-রোজাগারে কোন মতে তাদের চলছে সংসার। পুরাতন আবাসনের ঘরের চাল ও বেড়ায় মরিচা ধরে বসবাসের অযোগ্য ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে শীত কস্টে কাটছে তাদের জীবন। সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা পায় না তারা। নাসিমা বেগম বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের আমলে তারা কিছু সাহায্য যেমন-ঈদ-কোরবানীর সময় ১০/১২ কেজি রিলিফের চাল, রমজানে চিরা, গুড়, মুড়ি ইত্যাদি পেয়েছে। কেউ কেউ শীতের গরম কাপর কম্বলও পেয়েছে। কিন্ত এর পরে আর কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে নাই। বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা তারা পাচ্ছে না। একই অভিযোগ করেন, ১নং ব্লকের ৫নং বাসার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ভোটের সময় সবাই আমাদের চেনে, ভোট শেষে কেউই তাদের খোঁজ খবর রাখে না। তিনি বলেন, এ আবাসনের বাসিন্দারা সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বসবাসের জন্য তৈরী ঘরের বেড়া-চাল নস্ট হয়ে গেছে, মেরামতের দরকার। কিন্ত মেরামত হচ্ছে না। টয়ললেট অকেজোঁ , টিউওয়েলে পানি ওঠে না। বাজার থেকে পানি খেতে হয়। পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা নেই। নানা অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্ন মানবেতর পরিবেশে বসবাস করতে হয়।

এ বিষয়ে আংগারিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম মর্তুজা বলেন, ইউনিয়নের অতি দরিদ্র ছিন্নমূল অসহায় পরিবার গুলো আশ্রয়নে বসবাস করছে। আমার সময় পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা করা সম্ভব তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। অনেককে ব্যক্তিগত ভাবেও সাহায্য সহায়তা দিয়েছি এবং দিচ্ছি। বর্তমানে আবাসনের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় মেরামত করা দরকার। এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

আংগারিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো: সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার বলেন, আশ্রয়নের মানুষগুলো প্রকৃতপক্ষেই অসহায় ও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছে। চাহিদার তুলনায় পরিষদের বরাদ্দ খুবই কম। স্বল্প বরাদ্দে সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় বরাদ্দ বন্টন করা হবে।

দুমকি উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা বিভাগের কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাস বলেন, আবাসন প্রকল্পের শেডগুলো সংস্কারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুততার সাথে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, জলিশা আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের নাগরিক সেবা নিশ্চিৎ কল্পে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংস্কার প্রশ্নের জবাবে বলেন, পিআইওর সাথে বসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads