• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস

  • খায়রুল আহসান মানিক, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন সকালে কুমিল্লা শহর ও সংলগ্ন এলাকসমূহ পাক হানাদার মুক্ত হয়। এদিন কুমিল্লাবাসী মুক্তি পায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হত্যা নির্যাতন দু:শাসন থেকে। দীর্ঘ নয় মাসের নিস্তদ্ধতা ভেঙ্গে জেগে ওঠে কুমিল্লা। মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী আর জনতার আনন্দ উল্লাসের মুক্তির চিরস্তন স্বপ্ন বাস্তবায়নের ধ্বনিতে চর্তুদিক মুখরিত করে জয় বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু গগনবিদারী শ্লোগানে উচ্চারিত হতে থাকে। মুক্তিপাগল জনতার ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কুমিল্লার মুক্ত আকাশ। কিন্তু তখনো কুমিল্লা সেনানিবাসের পতন হয়নি।

কুমিল্লা ও ময়নামতি সেনানিবাস পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ৩ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর সম্মিলিত পরিকল্পিত আক্রমন শুরু হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল আর ডি হিরার নেতৃত্বাধীন ২৩ মাউন্টের ডিভিশন এ দায়িত্বে ছিলেন। ৩ ডিসেম্বর রাতে যৌথবাহিনীর ৩০১ মাউন্ট বিগ্রেড এর মুক্তিবাহিনীর ইস্টার্ন সেক্টর লালমাই পাহাড় ও লাকসামে পাকিস্তানী বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙ্গে ফেলে এবং লাকসাম-কুমিল্লা সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়।

যৌথবাহিনী লাকসামের মুদাফফরগঞ্জে এগিয়ে যাওয়ার পথে পাকিস্তানী বাহিনীর ২৫ তম ফোর্সের কমান্ডিং অফিসার সঙ্গীয় অধিকাংশ সৈনসহ এ সংঘর্ষে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পন করে। ৬ ডিসেম্বর লাকসামের মুদাফফরগঞ্জ মুক্ত হয়। ৭ ডিসেম্বর বিগ্রেডিয়ার পান্ডের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনীর একটি অংশ গোমতী পাড় হয়ে চান্দিনা এবং জাফরগঞ্জে অবস্থান গ্রহণ করে এবং ঢাকার সঙ্গে ময়নামতি সেনানিবাসের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

৬ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মোতাবেক ৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন অংশ কুমিল্লা শহর অভিমুখে অগ্রসর হয়। এদিন রাতে অগ্রসরমান যৌথবাহিনীর একটি অংশ নয়াবাজার এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে কুমিল্লা বিমান বন্দরে। সীমান্তের নিকটবর্তী বিমান বন্দরে ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ১১ গুর্খা রেজিমেন্ট কমান্ডার আরকে মজুমদারের নেতৃত্বে এবং মুক্তিবাহিনীর মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে সীমান্ত অতিক্রম করে তিনদিক থেকে বিমানবন্দর এলাকা ঘিরে ফেলে। বিবির বাজার দিয়ে লেঃ দিদারুল আলমের নেতৃত্বে এবং অপর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে ভাটপাড়া ও চৌদ্দগ্রামের বাঘের চির দিয়ে প্রবেশ করে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সেনারা বিমান বন্দরে পাকিস্তানী বাহিনীর উপর রাতেই মটার ও আটিলারী দিয়ে আক্রমন চালাতে থাকে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর মারমুখী আক্রমনে ভোরে বিমানবন্দরে অবস্থানরত পাক বাহিনীর সেনরা পিছু হটে সেনানিবাস ও বরুড়া দিকে চলে যায়। কতিপয় পাকিস্তানী বাহিনীর সেনা সদস্য ধরা পড়ে আত্মসমর্পন করে। বিমান বন্দরের রাতব্যাপী সম্মুর্খে যুদ্ধে ২৬/২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। রাতের মধ্যেই বিমান বন্দরে পাকিস্তানী বাহিনীর ঘাঁটির পতন হয়। পরে সকালে বীর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরের বিবির বাজার, চকবাজার এলাকা এবং ভাটপাড়া এলাকা দিয়ে।

৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত অঞ্চলের আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় বিকালে কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী এবং কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক এডভোকেট আহমেদ আলী।

এদিকে কুমিল্লা শহর মুক্ত হলেও শহরের ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়নামতি সেনানিবাস তখনও পাকিস্তানী বাহিনীর দখলে। বিভিন্ন স্থান থেকে পাক বাহিনীর সেনাসদ্যসরা পিছু হটে এ সেনানিবাসে আসে। পাক সেনারা ময়নামতি সেনানিবাস রক্ষায় তিনটি ব্যুহ রচনা করে ট্যাংক ও কামান দিয়ে প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে। এ জন্য যৌথবাহিনী ময়নামতি সেনানিবাস অবরোধ করে অনবরত বিমান হামলা চালাতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মিত্রবাহিনীর হাতে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের সকল পর্যায়ের পাক সেনা সদস্যরা স্থানীয়ভাবে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে। এ সেনানিবাসে অবস্থান রত পাকবাহিনীর ২ জন বিগ্রেডিয়ার ৭২ জন অফিসার ১৭৫ জন জেসিও এবং ৩ হাজর ৯১৮ জন পাক সেনা আত্মসমর্পন করে।

প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও কুমিল্লা মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়ে আনন্দ মিছিল মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী আলোচনা সভা সৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads