• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে নজরুল!

ইনসেটে- নজরুল

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে নজরুল!

  • বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার পশ্চিম কুর্শার দিনমজুর রূপালী। এক সময় তিনবেলা খেতে না পারলেও বর্তমানে ছেলে নজরুলের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে গড়ে ত‍ুলেছে টাকার পাহাড়। অভিযোগ আছে দেশের অসহায় মানুষদের সাহয্যের নাম করে তার প্রবাসী আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় বিদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে।

ব্যাংকের যোগসাজশে রুপালির এ ভেলকিবাজি আজও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়ার অনুমতি থাকলেও ৩০ কিলোমিটার দূরে একই পরিবারকে কোটি কোটি টাকা ঋণ সরবরাহ করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে রুপালীর পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক হিসাব নং ৩৫২৩৯ সহ বিভিন্ন একই ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে কয়েক শ কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে গ্রহণ করে। এ অবৈধ অর্থ সন্ত্রাস ও জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও লোকমুখে শোনা যায়।

তার জেষ্ঠ্যপুত্র বহুরূপী নজরুলের মাধ্যমে মেসার্স আলতাফ ব্রীকস ফিল্ডের মালিক হাজী রূপালী প্রভাব ও প্রতিপত্তি গড়ে তোলে। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ইটভাটা নির্মাণ করে জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে তারা। এর প্রেক্ষিতে আফতাব ব্রীকস ফিল্ডের পার্শ্ববর্তী মেসার্স কামাল ব্রীক ফিল্ডের অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ২২ জানুয়ারি এলাকাবাসীর পক্ষে এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন মাসুদ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

তারা নিকলী ও কটিয়াদি উপজেলায় অনিয়ম করে ৪টি ইটভাটা নির্মাণ করেছে যার একটির ২০শতাংশের অংশীদার আমজাদ হোসেন। নির্মিত ইটভাটাগুলো জনবসতির গা ঘেঁষে হওয়ায় তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া জনজীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়াও লোকালয়ে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ। এর প্রভাবে শিশুদের মধ্যে বিকলঙ্গতাসহ নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইটভাটার পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহন অদক্ষ চালকদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় প্রতিদিন ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এ পর্যন্ত তাদের পরিবহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রসহ ৩ (তিন) জন নিহত হয়েছে যা নামমাত্র ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। পঙ্গুত্ববরণ করেছে অনেকেই।

আবাদি জমির ফসল ও বিভিন্ন ফলজ গাছের স্বাভাবিক শ্বসনকার্যে বিঘ্ন ঘটায় দেখা দিচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়। এ বিষয়ে পরিবেশ দপ্তর কিশোরগঞ্জ অফিসের সহকারী পরিচালক (সিনিয়র কেমিস্ট) কাজী সুমন বলেন, নিকলী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন ছাড়পত্র দিয়ে বলেছেন, নির্মিত ব্রীক ফিল্ডগুলো আবাদি জমিতে নির্মাণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরাও ব্রীফ ফিল্ড নির্মাণে প্রত্যয়ন পত্র ইস্যু করেছে। সে কারণে ছাড়পত্র নবায়ন স্থগিতকরণে আমাদের কোন আইনগত বাধা নেই। ব্রীক ফিল্ডের প্রোপ্রাইটর রুপালীকে মুঠোফোনে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

নিকলী উপজেলার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য অভয়াশ্রম রোদা নদীর দুটি বাঁকে দুটি ইটভাটা নির্মাণ করায় ভাটার রাবিশ (ইটের ভগ্নাংশ) ফেলে নদী ভরাট করে চলেছে প্রতিনিয়তই। এছাড়াও মেঠো পথ ও সরু পথগুলো অতিরিক্ত মাটি বোঝাই ট্রাক চলাচলের ফলে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকে দফায় দফায় নোটিশ জারি করেও কোন প্রতিকার মেলেনি।

উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, নদীর প্রায় ১০০ শতাংশ জায়গা দখলে নিয়েছে রুপালী। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর মুখে মুখে অভিযোগ থাকা সত্তেও তাদের অস্ত্রধারী বাহিনীর প্রভাবে মুখ খোলার সাহস পায়নি কেউ।

রুপালীর পুত্র নজরুলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ছাড়াও রয়েছে মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগ। তার মাদকের সিন্ডিকেটের জাল ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশজুড়ে। উজেলার নিকলী জি সি পাইলট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সনদ জালিয়াতি করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমায় অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে। ২০০০ সালে অস্ট্রিয়ায় বসবাস শুরু করে। সেখানেও গড়ে তোলে নারী, মাদক, মানবপাচার ও জুয়াসহ নানা অপরাধের এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক । পরে যা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। অবৈধ মাদক ব্যবসায়ের দায়ে অস্ট্রিয়ার ফৌজদারী আইনের ৫২ অনুচ্ছেদে ৪ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত হন।

তবে নজরুল এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি ভিয়েনার এখানে এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই। তার বিরুদ্ধে আনীত অন্যান্য অভিযোগও অস্বীকার করেন।

জানা গেছে, অস্ট্রিয়ার ব্যাংক অব ভাওয়াগ এবং ব্যাংক অব অষ্ট্রিয়া থেকে প্রায় এক লাখ ইউরোর বেশি ঋণ খেলাপি হলে পুলিশ তাকে ধাওয়া করে। পুলিশে ধাওয়া খেয়ে দেশে ফিরে এখানে পুনরায় কায়েম করে ত্রাশের নতুন রাজত্ব। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দাদের অস্ট্রিয়া নেয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে অস্ট্রিয়া থেকে পালিয়ে দেশে আসলে প্রতারিত ভুক্তভোগিরা তাকে চাপ প্রয়োগ করে। নজরুল প্রতারিতদের দূরে রাখতে তার সশস্ত্র বাহিনীর অপশক্তি প্রয়োগ করে।

তার প্রতারণার শিকার কটিয়াদি উপজেলার ইসলাম উদ্দিন, কাজী হান্নান, আজিজুল পাঠান, ডাবলু, শফিকুল, সজিব, পাকুন্দিয়া উপজেলার সুমন মিয়া, নিকলী উপজেলার ভজন বর্মন, জামশেদ আলী, ঢাকা ডেমরার আব্দুল মোতালিব, এছাড়াও মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর উপজেলার অন্তত ১০ যুবক। এমন আরো শতাধিক যুবকের সাথে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রতারণার শিকার নিকলী উপজেলার জামশেদ আলী জানান, দুই দফায় তাকে আমি ৩ (তিন) লাখ টাকা দিয়েও বিদেশ যাওয়ার কোন সুযোগ পাইনি। পরে সে দেশে আসলে মুঠোফোনে টাকা ফেরত চাইলে তার ভাড়া করা ২০ জন সন্ত্রাসের একটি দল আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাড়া করে। ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় উঁৎ পেতে থাকা অপর একটি দল আমার মোটরসাইকেল ভাংচুর করে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ তোলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নজরুলের নির্যাতনের শিকার তার আত্মীয় স্বজনরাও আতঙ্কে দিনযাপন করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তার কতিপয় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা নিকলী থানায় একাধিক সাধারণ ডায়রীর আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছে তবে আদালতে তাদের করা একাধিক মামলা নথিভূক্ত হয়েছে। নিকলী থানার ওসি বলেন জিডি করতে চাইলে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads