• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পরিত্যাক্ত কোর্ট ভবন অপসারণ জটিলতায় মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ

বরগুনার বামনায় মডেল মসজিদ নির্মাণের নির্ধারিত স্থান। পাশেই পরিত্যাক্ত কোর্ট ভবন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

পরিত্যাক্ত কোর্ট ভবন অপসারণ জটিলতায় মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ

  • বামনা (বরগুনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২০ জানুয়ারি ২০২০

পুরাতন কোর্ট ভবন অপসারণ জটিলতার কারণে থেমে আছে বরগুনার বামনা উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। উপজেলা পরিষদ সমন্বয় সভা করে পরিত্যাক্ত কোর্ট ভবনটি অপসারণের জন্য সভার রেজুলেশন কপি আইন মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বামনা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে তা পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে কবে নাগাদ ভবনটি অপসারণ করে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হবে এ নিয়ে রয়েছে সংশয়।

জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধীকার ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তার অংশ হিসাবে বরগুনার বামনা উপজেলায় গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা এই দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা পরিষদের সামনেই মসজিদটি নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়। ওই নির্বাচিত স্থানে রয়েছে পরিত্যাক্ত একটি কোর্ট ভবন। যেটি এখন মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে বাঁধার সৃষ্ঠি করছে। কোর্ট ভবনটি অপসারণ করার যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মসজিদ নির্মান কাজ শুরু করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় মডেল মসজিদ দৃশ্যমান হলেও এ উপজেলায় শুধুমাত্র টেষ্ট পাইল করা ছাড়া মসজিদটি নির্মানের কোন অগ্রগতি নেই। তাই এ উপজেলার মুসুল্লিদের মনে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। মুসুল্লিদের দাবি দ্রুত কোর্ট ভবন অপসারণ করে মডেল মসজিদটি নির্মান কাজ শুরু করার।

উপজেলা কোর্ট মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প এই মডেল মসজিদ। এটি নির্মিত হলে ইসলামিক সংস্কৃতির প্রসারতা ঘটবে। তাই মসজিদটি দ্রুত নির্মান শেষ হওয়া জরুরী।
বরগুনা জেলা গনপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, বামনা উপজেলায় প্রায় ৪৩ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হবে এই মসজিদটি। আর এটি নির্মানের জন্য এম খান লিঃ এ.এস.আই(জেভি) নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ওয়েবসাইটের সূত্রে জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধীকার ভিত্তিক প্রকল্প হিসোবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মান কাজ শুরু হয় যার নির্মান ব্যায় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। মসজিদ গুলো ২০১৭ হতে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। জেলা ও উপকূলীয় পর্যায়ে ৪ তলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন তলা দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ নির্মিত হবে। সেখানে থাকবে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামায আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরী গবেষনা ও দীনি দাওয়া কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন হেফজ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশী পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বরগুনা জেলার উপ-পরিচালক মো. আ. মতিন হাওলাদারের কাছে মসজিদ নির্মান কাজ কেন বন্ধ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদটি নির্মান কাজ তদারকি করেন গণপূর্ত বিভাগ। কেন কাজ বন্ধ আছে এবিষয়ে আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসকের সভায় বিষয়টি তোলা হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বামনা উপজেলার মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মানের জন্য এম খান লিঃ এ.এস.আই(জেভি) নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি স্থান নির্বাচনের পর ভবন নির্মানের জন্য তিনটি লোড টেষ্ট পাইল বসায়। মুসুল্লীদের নামাজ আদায়ের জন্য উপজেলা পরিষদের বাউন্ডারীর মধ্যে একটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মান করে। শুধুমাত্র কোর্ট ভবনটি অপসারণ না করার কারনে মসজিদটি নির্মান কাজ শুরু করতে পারছেনা প্রতিষ্ঠানটি।
এম খান লিঃ এ.এস.আই(জেভি) কনস্ট্রাকশনের মালিক রফি উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান কাজটি পাওয়া সাথে সাথে এ উপজেলায় কাজ শুরু করে। তবে যেখানে মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে সে জমির উপর রয়েছে পরিত্যাক্ত কোর্ট ভবন। ওই ভবনটি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত মসচিদ নির্মান কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, কোর্ট ভবনটি ভাঙ্গার জন্য অনেকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছেন সমন্বয় সভা করে সকলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ভবনটি ভাঙ্গার উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। আগামী মাসে সমন্বয় সভা আহবান করে সভার রেজুলেশন দপ্তরে পাঠানো হবে।

গণপূর্ত বিভাগের বরগুনা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাজিদার রহমান বলেন, মডেল মসজিদ নির্মানের স্থানে পুরাতন কোর্ট ভবন থাকায় সেটি অপসারণ জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙ্গার অনুমোতি পেলেই মসজিদ নির্মান কাজ শুরু হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, পরিত্যাক্ত কোর্ট ভবনটি অপসারণের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। অচীরেই ওই ভবনটি অপসারণ করে মসজিদ নির্মান কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads