• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সোনাহাট স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়েক হাজার মানুষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

সোনাহাট স্থলবন্দরে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়েক হাজার মানুষ

  • প্রকাশিত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শামসুজ্জোহা সুজন, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম)

ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দরে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক ও তাদের স্বজন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শতাধিক শ্রমিক শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে প্রায় ২শ’ পাথরভাঙা মেশিনের বিকট শব্দ ও পাথর ভাঙার ফলে সৃষ্ট ধুলা আর খানাখন্দে ভরা কাঁচা রাস্তা দিয়ে অনবরত ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে ওই এলাকা ধুলোয় আচ্ছাদিত থাকে। কোনো প্রকার মাস্ক ব্যবহার করা ছাড়াই প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক এসব মেশিনে দিনরাত কাজ করছে। দিনের পর দিন মাস্ক ছাড়া কাজ করায় তারা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, বুকের ব্যথা, অ্যালার্জিসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

শুধু শ্রমিক নয়, আশপাশে বসবাস করা মানুষজন ও ব্যবসায়িক কাজে আগতরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত লোকমান আলী (৫০) ও জ্যোৎস্না বেগম (৪২) তাদের এক্স-রে রিপোর্ট দেখানোর সময় আশপাশের জাহানারা বেগম, সামিনা বেগম, মহিরণসহ আরো অনেকেই জানান, এলাকার অধিকাংশ মানুষই এ ধরনের রোগে আক্রান্ত। তারা আরো জানায়, শ্বাসকষ্টে ভুগে রেজিয়া বেগম ও ফিরোজা খাতুনসহ ৪ জন মারা গেছে। অসুস্থ হয়েছে আরো শতাধিক ব্যক্তি। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ব্যাপক হারে।

স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ সায়েম জানান, নাক ও মুখে কোনোরূপ প্রটেকশন ছাড়া পাথর ভাঙার কাজ করলে সিলিকোসিস, ডাস্ট অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসে নানাধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন কাজ করলে পাথরকুচি ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

পাথরভাঙা মেশিনের শব্দে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। সোনাহাট দাখিল মাদরাসার শিক্ষক আসমত আলী জানান, শব্দ ও ধুলার কারণে ক্লাস রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে পাঠদান করতে হচ্ছে। এ সময় শ্রমিক নেতা আব্দুল বাতেন একটি দোকানের খাবার ঢেকে রাখা পলিথিনের উপর জমে থাকা ধুলোর আস্তর দেখিয়ে বলেন এই হলো অবস্থা, আমরা নিজেদের উদ্যোগে পাথরভাঙা মেশিন মালিকদের বহুবার পানি ছিটানোর অনুরোধ করেছি। ধর্মঘট করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। পাথরভাঙা মেশিনের বিকট শব্দে মাথাব্যাথা ও শ্রবন শক্তি কমে যাওয়ার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

নায়েব সুবেদার আবদুস সবুর বলেন বিকট শব্দ ও ধুলার কারণে এখানে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পরেছে। বিজিবি সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এক নাগারে কেউই দুই ঘণ্টা ডিউটি করতে পারছেনা। স্থলবন্দর ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি।

কৃষক মিজানুর রহমান জানান ফসলের পাতার ওপর পাথরের গুঁড়া ও ধুলার আস্তর পরে থাকায় শস্যের ফলন ভালো হচ্ছে না, ফলদ বৃক্ষগুলোর পাতায় পাতায় জমে আছে ধুলা, এতে সালোক-সংশ্লেষণ ব্যাহত হওয়ায় ফল আসছে না।

সোনাহাট স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, শ্রমিকরা যাতে মাস্ক ব্যবহার করে এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে তারপরও মাস্ক ব্যবহার করে না।

তিনি জানান, কাজ শুরুর আগে মেশিন এলাকায় পানি না ছিটানো এবং শ্রমিকদের মাস্ক না পরায় ইতোমধ্যে কয়েকটি মেশিন বন্ধ করা হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, মালিকরা মাস্ক কিনে দিয়েছেন কিন্তু তারা ব্যবহার করছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads