• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
‘মিডিয়াকে অ্যাভয়েড করো মামলা প্রত্যাহার করব’

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

‘মিডিয়াকে অ্যাভয়েড করো মামলা প্রত্যাহার করব’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২০

'এখন মিডিয়াকে অ্যাভয়েড (এড়ানো) করে থাকো। মিডিয়াতে কথা বলো না। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপাতত চিন্তা করার দরকার নেই। ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা করার কিছু নেই। আমরা তোমার পাশে থাকব। তোমার মামলা প্রত্যাহার করে নেব। একটু সময় দিয়ো। একটু পজিটিভলি দেখতে হবে'।

জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপরই এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব বলেছিলেন সদ্য প্রত্যাহার হওয়া কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন।

তিনি আরিফকে ফোনালাপে বলেন, যাই হোক একটি ঘটনা ঘটে গেছে। তুমি একটু রেস্ট নাও। যাও। একটু নিরিবিলি থাকো। এ কথোপকথনে তিনি যে পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কথোপকথনে এনকাউন্টারে দেওয়ার হুমকি পাওয়ার মতো অপরাধ করেছেন কি না সাংবাদিক আরিফ তা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, এনকাউন্টারের মানসিকতা আসলে আমাদের ছিল না। ওইভাবে ছিল না।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নির্দেশে সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর) নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪০ জনের একটি দল বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফের বাসার দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে মারধর করে প্রথমে এনকাউন্টার দেওয়ার (গুলি করে হত্যা করার) হুমকি দেয়। সেখান থেকে তাকে তুলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। এরপর সাজানো মামলায় ৪৫০ গ্রাম দেশি মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা সঙ্গে দিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় অধূমপায়ী আরিফকে। চোখ বাঁধা অবস্থাতেই চারটি কাগজে স্বাক্ষরও করতে বাধ্য করা হয় তাকে।

তাৎক্ষণিক বাংলা ট্রিবিউন ও পরে অন্যান্য গণমাধ্যমে এ ঘটনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গত ১৪ মার্চ বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। মন্ত্রিপরিষদেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয় এবং একটি কমিটি গঠন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনার বিষয়টি বুঝতে পেরে ১৫ মার্চ সকালে ডিসি পারভীন নিজেই কৌশলে আরিফের  জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অন্যদিকে আরিফের পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। না চাইতেই জামিন পেয়ে মারধরে গুরুতর অসুস্থ আরিফ যখন কারাগার থেকে বের হচ্ছিলেন, বাইরে তার জন্য দেশব্যাপী আন্দোলনের খবর তার জানা নেই, ঠিক ওই সময়েই ডিসি এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাংলা ট্রিবিউন এ কথোপকথনের একটি রেকর্ড হাতে পেয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরিফ বলেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ডিসি এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় আমি তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাই। আমি এ সময় তাকে কিছু প্রশ্ন করি। তিনি কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি আমাকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চুপচাপ থাকতে বলেন। আমি আসলে তখন আতঙ্কিত ছিলাম। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত ছিলাম।

কথোপকথনের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ডিসি পারভীনকে পাওয়া যায়নি। গত রোববার দুপুরে কুড়িগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। সোমবার ডিসি সুলতানা পারভীন এবং জেলা প্রশাসনের তিন কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু কান্তি দাশ ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

আরিফুল ইসলামকে চুপচাপ থাকার প্রস্তাব সংক্রান্ত ওই অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, আরিফের কাছে ডিসি প্রথমে তার অবস্থা জানতে চান। আরিফ তখন তাকে বেধড়ক মারধর কেন করা হয়েছে তা জানতে চান। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় স্বাক্ষর নেওয়া চারটি কাগজ ফেরত চান। প্রত্যুত্তরে ডিসি বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে ফেরত দেব... কথা বলে নিজে আমি তোমাকে ফেরত দেব...যদি নিয়ে থাকে ওরা। কোন কাগজে সই নিয়েছে। তোমার মোবাইল কোর্টের ইয়াতে সই ছিল, বুঝছ। আরিফ এসময় বলেন, আমার চোখ বাঁধা অবস্থায় চারটা সই নিয়েছে। প্রত্যুত্তরে ডিসি বলেন, মোবাইল কোর্টের আদেশে তোমার সই নিয়েছে। ওটা মোবাইল কোর্টের ইয়াতেই। আচ্ছা, যাই হোক এখন ঘটনা যেভাবে ঘটে গেছে, যা ঘটেছে তুমিও ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেইখো। আমি নিজেও আসলে অনুতপ্ত। তুমি একটু রেস্ট নাও। যাও। থাকো। নিরিবিলি একটু থাকো, ঠিক আছে।

আরিফ এ সময় এনকাউন্টার দেওয়ার মতো অপরাধ করেছেন কি না তা ডিসির কাছে জানতে চান। প্রত্যুত্তরে ডিসি বলেন, এনকাউন্টারের মানসিকতা আসলে আমাদের ছিল না। ওইভাবে ছিল না। আরিফ তখন ডিসিকে বলেন, আপনি আমাকে একদিন ডাকতে পারতেন, আমি কি আসতাম না? এর উত্তরে ডিসি বলেন, ‘না, সেটা আসতা। এখনো আসবা, সমস্যা নাই। এখন ধরো যে, কষ্ট তো তুমিও পাচ্ছ, কষ্ট আমিও... হয়ে গেছে যেটা, এটা এদিকে দেখতে হবে একটু পজিটিভলি। এটাই বলার জন্য...।

আরিফের কাছে কী ইচ্ছা জানতে চাইলে সে ডিসিকে উদ্দেশ করে বলে, তারা কী উদ্দেশ্যে এ কাজটি করলেন এটা আমার জানা বাঞ্ছনীয়। তারা আমার চারটি কাগজে সই নিয়েছে, কেন নিয়েছে এটা আমার দেখতে হবে। আমার দুই নামেই সই নিয়েছে তারা। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত। প্রত্যুত্তরে ডিসি বলেন, তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এতটা চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে, ভালো থাকবা ইনশা আল্লাহ।

মিডিয়ায় ডাকতে পারে জানালে ডিসি বলেন, এখন কি করতে চাচ্ছ? আমি যেটা বলব যে এখন মিডিয়াকে অ্যাভয়েড করে থাকো। যাও। দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। আমরাও তোমার পাশে আছি আর কী।  আরিফ এসময় আবার চোখবাঁধা অবস্থায় স্বাক্ষর করা কাগজের প্রসঙ্গ তুললে ডিসি বলেন, ঠিক আছে আমি খোঁজ নিয়ে দেখি। এটা তো মোবাইল কোর্টের নির্দেশনাতেই ছিল। অন্য কিছুতে নেয়নি। আর তোমার বিষয়ে অত ইয়া তো আমাদের... যাই হোক... ঘটনাটা ঘটেছিল। মামলা প্রসঙ্গে বলেন, তোমার মামলা প্রত্যাহার করে দেব, সমস্যা নাই। একটু সময় দিও। একটা দুইটা শুনানির সময় লাগবে। তোমার চাকরির ব্যাপারেও আমি দেখব। চাকরির ব্যাপারে কোনো টেনশন করো না।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads