• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
করোনা ঠেকাতে সমন্বয় নেই মাঠ প্রশাসনে

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

করোনা ঠেকাতে সমন্বয় নেই মাঠ প্রশাসনে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ এপ্রিল ২০২০

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনকে বেশ কিছু কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ বাস্তবায়নে জোরেশোরে মাঠে নামলেও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশ সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের মধ্যে এ সমন্বয়হীনতা বেশি। যে কাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করার কথা, সেটি করছে পুলিশ। আবার যেটি সিভিল সার্জন করার কথা, সেটি করছে সিভিল প্রশাসন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও সিভিল সার্জনের কথায়ও সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আরও সমন্বয় বাড়াতে বন্ধের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সীমিত আকারে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাঠ প্রশাসনে কাজ করছেন কয়েক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী। কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় ও দ্বন্দ্ব বাড়ছে। প্রশাসন ক্যাডারের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের দুই কর্মকর্তা। অন্যদিকে সিনিয়র সিটিজেনকে কান ধরিয়ে তার ছবি তোলার ঘটনায় প্রশাসন ক্যাডারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে শুধু প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রশাসনের এমন দ্বৈতনীতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

এদিকে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয় সেখানে বাদ রাখা হয় পুুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি)। যদিও সমালোচনার মুখে পরে সে কমিটি সংশোধন করে মহা পুুলিশ পরিদর্শককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সরকারি ছুটি আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ লম্বা ছুটিতে প্রশাসনের মধ্যে এ সমন্বয়হীনতা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। সূত্রগুলোর মতে, এভাবে চলতে থাকলে মাঠ প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তাই মাঠ প্রশাসনে সমন্বয়হীনতা দূর করতে চলমান ছুটির মধ্যেও খোলা থাকছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির ক্ষেত্রে প্রশাসন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যসংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-১) এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। অফিস আদেশ অনুযায়ী, সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটির সব দিনেই জনপ্রশাসনের সাতটি টিম পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি টিমে তিনজন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী রাখা হয়েছে। তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখায় কাজ করবেন। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অণুবিভাগ) মো. আলী কদর বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করতেই এ উদ্যোগ। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা মাঠ প্রশাসনের তথ্য সংগ্রহ, চাহিদাসহ আনুসাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগটা বেশি রক্ষা করবে। এক কথায় সমন্বয়ের কাজটুকু আরো জোরালো করতেই বাস্তবভিত্তিক এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগ। এতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ২৬ জন সচিব থাকলেও সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) রাখা হয়নি। করোনা মোকাবিলায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য কাজ করলেও পুুলিশ প্রধানকে কমিটিতে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুলিশ ক্যাডার কর্মকর্তারা। তারা নিজেদের ফেসবুক পেজে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের এই কমিটিতে পুলিশপ্রধানকে অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও জেলা-উপজেলায় করোনা প্রতিরোধে গঠিত কমিটিতে পুলিশ প্রশাসনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এমন অভিযোগ মাঠ প্রশাসনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের।

করোনা প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন এলাকার জন্যও কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেই কমিটিতে মেয়র, পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন, তত্ত্বাবধায়ক, জেলা/জেনারেল হাসপাতাল, পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, বিভাগীয় উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা, পরিচালক বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়, পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে (সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন) রাখা হলেও পুলিশ প্রশাসনের কাউকে রাখা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনায় ত্রাণ সরঞ্জাম, ওষুধ, পিপিই, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বিতরণে সবচেয়ে বেশি সমন্বয়হীনতা রয়েছে। পিপিই সিভিল সার্জনের চাহিদা মোতাবেক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা কথা থাকলেও তা বিতরণ করছেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই না পেয়ে সিভিল প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও রাজনৈতিক কর্মীরা বাগিয়ে নিচ্ছেন। এতে হাসপাতালে পিপিই সংকটে ব্যাহত হচ্ছে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা। এ ছাড়া লোকাল বাজারে কোনো দোকান খোলা রাখা হবে আর কোনো দোকান খোলা রাখা যাবে না, তা নিয়েও পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষিপণ্য বিক্রি করা দোকানগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কৃষিপণ্য বিক্রির দোকান খোলা রাখা যাবে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এমন কথাই জানান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, সিলেট জেলার সব ওসিকে আমি বলে দিয়েছি, বাজারে দোকানপাঠগুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করতে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার এবং কৃষিপণ্য বিক্রি হয়-এমন দোকান যাতে খোলা রাখা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন দোকান খোলা রাখা হবে কোনটা বন্ধ হবে তা দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। পুলিশ শুধু সচেতনতা ও শৃঙ্খলার কাজটুকু করার কথা। কিন্তু আগ বাড়িয়ে এ কাজ করছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, জরিমানা করার মতো কাজও করছে তারা। অন্যদিকে ডাক্তাররা রোগীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠালেও পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আবার ডাক্তারের কাছে এনে নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছেন এমন ঘটনা ঘটেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads