করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাট-বাজারে সেই সামাজিক দূরত্ব অনেকেই মানছেন না। হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা সারাক্ষণ ভীড় করেই যাচ্ছেন।
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানে আগের মতই মানুষের আড্ডা চোখে পড়ছে। প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না তারা কেউ।
আজ সোমবার মিরসরাই সদরের মাছ বাজারে দেখা গেছে, মাছ কিনতে ক্রেতারা ভীড় করছেন। তাদের মাঝখানে ১০ ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেননি। হাতে গ্লাভসও নেই। দোকানি ও ক্রেতার মাঝখানেও তেমন দূরত্ব রক্ষা করা হয়নি। এছাড়া, ক্রেতা-বিক্রেতাদের যেখানে সেখানে কফ-থুথু ফেলতে দেখা গেছে।
কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে জানেন। কিন্তু কেনাকাটা করতে এসে পরিস্থিতির কারণে ঠিকমতো সেই দূরত্ব রক্ষা করা যাচ্ছে না।
আর বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললেও তারা কেউ শোনেন না।
জানা গেছে, ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও সবজির দোকান ব্যতিত সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। উপজেলার অনেক বাজার এই নির্দেশনা মানছেনা। প্রায় সব দোকান খোলা রেখেছে অনেকে।
করেরহাট ইউনিয়নের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, মানুষের মধ্যে কোন সচেতনতা নেই। আগের মতই বাজারে চলাফেরা করছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর থেকে যারা গ্রামে আসছে তারা বাড়িতে না থেকে বাজারে আড্ডা জমাচ্ছে। অথচ তাদের হোম কোরারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক।
জানা গেছে, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে অবস্থিত চায়ের দোকানগুলো এখনো খোলা রয়েছে। তারা আগের মত বিব্যি বেচাকেনা করছে। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর, হাইতকান্দি ইউনিয়নের কুরুয়া, ইছাখালী ইউনিয়নের এছাক ড্রাইভারহাট, ছোটকমলদহ বাজারের সালা উদ্দিন চায়ের দোকানগুলোতে আগের মতই মানুষের ভীড় দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসের বিষয়টি নিয়ে গ্রামের মানুষ সচেতন না। তারা এই বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
নিয়ম না মানা ও সচেতনতার অভাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ধাপ হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। করোনা একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষে সর্বনিম্ন ৩ ফুট ও সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্বে ছড়াতে পারে। তাই মানুষে-মানুষে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরী।
তিনি আরও বলেন, বাজারে যেভাবে ভীড়ের কারণে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘিত হচ্ছে, তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
এই বিষয়ে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান ও জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, আমরা বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ওষুধ, মুদি ও সবজি দোকান ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দিয়েছি। এরপর মানুষের সচেতনতার সৃষ্টি লক্ষে এলাকায় গিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরও কোন কোন বাজারে ও গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানগুলো বন্ধ করতে অভিযান শুরু করবো।