• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
টেকনাফে পুলিশের অভিযানে তিন ডাকাত নিহত, উদ্ধার হয়নি অপহৃতরা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

টেকনাফে পুলিশের অভিযানে তিন ডাকাত নিহত, উদ্ধার হয়নি অপহৃতরা

  • টেকনাফ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ মে ২০২০

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী মাদ্রাসা পাড়ার মৃত আব্দুল মজিদ ওরফে ভুলাইয়্যা বইদ্যের পুত্র নুরুল আলম (৪০) ও ছৈয়দ আলম (৩৫) এবং শব্বির আহমদের পুত্র সৈয়দ হোসেন ওরফে আব্দুল মোনাফ মনাইয়া (২০)।  এরপরও উদ্ধার হয়নি অপহৃত শাহেদ ও ইদ্রিস।  

বুধবার ভোরে রঙ্গীখালী পাহাড়ি আস্তানায় এ ঘটনা ঘটে।  পুলিশের দাবী নিহতরা এলাকার চিহ্নিত ডাকাত। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা।  ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করা হয়েছে ১৮ টি ছোট বড় অস্ত্র, ২২৪ রাউন্ড গুলি ও ৫৬ হাজার পিস ইয়াবা। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী জনপদ, অবৈধ অস্ত্র তৈরীর কারখানা, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত ছিলো টেকনাফের রঙ্গিখালী গাজী পাহাড়। ওই পাহাড় ঘিরেই চলতো নানা অপরাধ কর্মকান্ড। আর এসব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতো নুরুল আলম গ্রুপ। বুধবার ভোরে খবর আসে রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম সম্প্রতি অপহৃত টেকনাফ মিনাবাজার এলাকার ভিকটিম সাহেদ ও ইদ্রিসকে সাথে নিয়ে অপরাপর সহযোগীসহ গাজী পাহাড়ে অবস্থান করছে। এমন সংবাদে ভোর সাড়ে ৬ টার দিকে এখানেই হানা দেয় পুলিশ। টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম পাহাড়ের কয়েক দিক দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বেশ কিছু অস্ত্র, গুলি উদ্ধার হয়। বেশ সফলতাও পায় পুলিশ। তবে মূলহোতা আব্দুল হাকিম ডাকাত দুই ভিকটিমসহ অধরাই রয়ে যায়।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ নেতৃত্বে পুলিশ অভিযানে গেলে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।  পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে।  পুলিশের ইন্সপেক্টর লিয়াতক, মশিউর রহমান, এএসআই সনজিব দত্ত, মিঠুন কুমার ভৌমিকসহ পুলিশ সদস্যরা শর্টগান হতে ৩২০ রাউন্ড, পিস্তল হতে ৯ রাউন্ড, চায়না এসএমজি হতে ২৫ রাউন্ড , চায়না রাইফেল হতে ১৫ রাউন্ডসহ মোট ৩৬৯ রাউন্ড ফায়ার করে। এ ছাড়া ৯টি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেডের হামলা চালালে স্বশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যায়। শত শত রাউন্ড গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে এলাকার সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসে। তাদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশি অভিযান বন্ধ করা হয় । 

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের আশেপাশে তল্লাশী করে ৫ টি দেশীয় তৈরী এক নলা বন্দুক,২টি থ্রি কোয়াটার বন্দুক, ১০টি দেশীয় এলজি, ১ টি বিদেশী পিস্তলসহ মোট ১৮টি অবৈধ অস্ত্র, ১১ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি,২০৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ মোট ২২৪ রাউন্ড গুলি, ৭২ রাউন্ড কার্তুজের খোসা , ৫৬ হাজার ইয়াবা, ৩ সেট বিজিবি ও ১০ সেট পুলিশের ড্রেসসহ রঙ্গিখালী মাদ্রাসা পাড়ার মৃত আব্দুল মজিদ ওরফে ভুলাইয়্যা বইদ্যের পুত্র নুরুল আলম (৪০), ছৈয়দ আলম (৩৫) ও শব্বির আহমদের পুত্র সৈয়দ হোসেন ওরফে আব্দুল মোনাফ মনাইয়া (২০) কে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে।

পরে আহত পুলিশ সদস্য এবং উদ্ধারকৃত সন্ত্রাসীদের চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দিয়ে গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসীদের আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে নিহত ছৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে ৬ টি নুরুল আলমের বিরুদ্ধে ২ মামলা রয়েছে।

 

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া অধহৃত দু’ভিকটিম উদ্ধার এবং  ডাকাতি দমনসহ অপরাধ ও মাদক নির্মূলে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ’

        প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল বুধবার বিকেলে টেকনাফের হোয়াইক্যং মিনাবাজার পাহাড়ি এলাকা হতে ৬ জন গ্রামের সাধারণ কৃষক ও রাখালকে অপহরণ করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অপহৃতরা হলেন কৃষক আবুল হাশেম ও তার দুই ছেলে জামাল এবং রিয়াজুদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র শাহেদ (২৫), মৌলভী আবুল কাছিমের পুত্র আকতার উল্লাহ (২৪) ও মৃত মোহাম্মদ কাশেমের পুত্র ইদ্রিস। সেখান থেকে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর বিনিময়ে হাসেমসহ তার দুই ছেলেকে ছেড়ে দিলেও ৩ জনকে আটকে রেখে মোবাইল  ফোনে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। এমন খবরে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্হানীয় লোকজনসহ পুলিশ  তাদের  উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু  পুলিশ ব্যর্থ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আকতার উল্লাহকে হত্যা করে খবর দেয় লাশ বুঝে নিতে এবং নির্ধারিত তারিখ ৫ মে’র মধ্যে ২০ লাখ টাকা না দিলে অপহৃত শাহেদ ও ইদিসের পরিণতিও একই ভাবে হত্যার হুমকি দেয়।

২০১৭ সালের আগষ্ট মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে পালিয়ে  আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা।  এর আগে ২০১৬,  ২০১২ সাল ও ১৯৯১ সালের দিকে যাওয়া আসার মধ্যে আরো যুক্ত হয় প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা।  বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪ ক্যাম্প মোট সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের  মধ্যে  গড়ে উঠেছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী।  এসব বাহিনী সাধারন রোহিঙ্গা  ও ক্যাম্পের পার্শ্বেও  গ্রামবাসীর জন্য যেনো বিষপড়ো।

অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক পাচার, গুম খুনসহ সকল ধরনের অপরাধ সংগঠিত করছে তারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads