• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
বকশীগঞ্জে বন্যহাতির ভয়ে পাহাড়ির দিন কাটছে শঙ্কায়, রাত কাটছে নির্ঘুম

লোকালয়ে নেমে আসছে হাতির পাল

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

বকশীগঞ্জে বন্যহাতির ভয়ে পাহাড়ির দিন কাটছে শঙ্কায়, রাত কাটছে নির্ঘুম

  • আবদুল লতিফ লায়ন, জামালপুর
  • প্রকাশিত ১০ মে ২০২০

বুনো হাতির তাণ্ডবে জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও প্রতিবেশী শ্রীবরদী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের ২৫টি গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বন্যহাতির আক্রমণে প্রতিদিন দশ হাজার পাহাড়ির দিন কাটছে শঙ্কায়, রাত কাটছে নির্ঘুম।

জানা গেছে, গত ১ সপ্তাহ যাবত বকশীগঞ্জ ও শ্রীবরদী সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে শতাধিক হাতির পাল কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে লোকালয়ে হামলা চালাচ্ছে।

গত বুধবার (৬ মে) দিনগত রাত ১টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাতানি পাড়া এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে আব্দুল মান্নান (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মান্নান বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের উত্তর পলাশতলা গ্রামের মৃত নাদের হোসেনের ছেলে।

বন্যহাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত একর জমির মৌসুমী ফসল। লন্ডভন্ড করেছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি। তছনছ করছে বন বাগানের বিপুল পরিমানে গাছপালা। অব্যাহত হাতির হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ের গ্রামীণ জীবন। তাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। সরেজমিনে এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

জানা গেছে গত কয়েক দিন থেকে রাতে গ্রামবাসী বন্যহাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আগুন জালিয়ে হৈ হুলোড় করে বাঁশ দিয়ে ফটকা বানিয়ে ঢাক ঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানো চেষ্টা করছিল।

বন্যহাতির ভয়ে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে ২৫ গ্রামের মানুষ আতঙ্ক দিন কাটছে। বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার সাতানিপাড়া, গারোপাড়া, বালুঝরি, দিঘলাকোনা, লাউচাপড়া, হাতিবেড়কোনা, শোমনাথপাড়া, চন্দ্রপাড়া, প্রতিবেশী শ্রীবরদীর কর্নজোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গাাজল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা পাঁচমেঘাদল পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা বন্যহাতির উপদ্রবে ভয়ে তটস্থ থাকে।

জানা গেছে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্ত ঘেষেঁ বকশীগঞ্জ ও শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের সাতানিপাড়া, গারোপাড়া বালুঝরি, টিলাপাড়া, লাউচাপড়া, দিগলকোনা,হাতিবেড়কোনা,শোকনাথপাড়া,চন্দ্রপাড়াসহ ১২টি গ্রাম প্রতিবেশী শ্রীবরদীর কর্নজোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গাাজল, কাড়ামারা হারিয়েকোনা পাচমেঘাদলসহ ১৩টি গ্রামে বাঙালী ও হিন্দু গারো কোচ হাজংসহ বিভিন্ন গোত্র মিলে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছে।
এসব এলাকায় বাংলাদেশে ও ভারতের ভূখন্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপেক্ষাকৃত সমতল। ভারতের গহীন বনাঞ্চল রয়েছে অগনিত বুনো হাতি। হাতি দল বেধেঁ সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও আহার করতে সহজ মনে করে থাকে। তাই সময় অসময়ে বুনো হাতির পাল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওইসব সমতল বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষিপ্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত বাড়িঘর ফসলাদি জমি ও বিভিন্ন বাগানে প্রবেশ করে ধ্বংসলীলা চালায়। আবার ফিরে যায় হাতির পাল।

গত ১৫ বছর ধরে এসব বন্যহাতির তাণ্ডবলীলায় সীমান্তবর্তী এসব পাহাড়ি গ্রামগুলোতে অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। হাজার হাজার একর জমির ধান শাকসবজি ফসল খেয়ে এবং বাগানের গাছপালা দুমড়ে মুচড়ে সাবাড় করে চলেছে। বুনো হাতির আক্রমণে বালিজুরি গ্রামের হামির উদ্দিন বাবুল মিয়া, খ্রিষ্টানপাড়া গ্রামের ষ্টারসন, শোমনাথপাড়া গ্রামের ফিলিপ সাংমা, ঝুলগাও গ্রামের মজিবর, সিরাজ, হাতিবর গ্রামরে বৃন্দাবন দাস, মাখনেরচর গ্রামের হাসান হাবিব বাঘারচর গ্রামের আবু তালেবসহ অর্ধশতাধিক মানুষের প্রানহানি ঘটেছে। কয়েকশত মানুষ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন পঙ্গুত্ব বরন করে দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে।গৃহহীন হয়ে পড়েছে কয়েক’শ পরিবার।

বালুঝরি গ্রামের ফতেহ সাংমা,শাহজাহান, ফিলিপ মারাকসহ অনেক গ্রামবাসী জানায়, বুনো হাতি ঢাকঢোল ফটকা ও আগুনকে ভয় করে থাকে। তাই এলাকাবাসী মশাল ও বন থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা জ্বালিয়ে হৈ হুলোড় করে বাঁশ দিয়ে ফটকা বানিয়ে ঢাকঢোল পিঠিয়ে হাতি তাড়ানো চেষ্টা করে। অনেক সময় বাধা না পেলে হাতির দল গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের ক্ষতিসাধন করে থাকে।

লাউচাপড়া গ্রামের মুক্তার আলী বলেন, বন্যহাতির বিচরণ এলাকায় পর্যাপ্ত খাবার নেই। ক্ষুধার্ত হলেই লোকালয়ে চলে আসে হাতির দল। আর তখনই কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দিঘলাকোনা গ্রামের পিটিসং সাংমা বলেন, আমাদের জীবন জীবিকার জন্য পাহাড়ে কলা, হলুদ, আদা এবং পাদদেশের ফাঁকে ফাঁকে ধান চাষ করি। এসব ফসল খাওয়ার জন্য হাতির দল লোকালয়ে চলে আসে। স্থানীয়রা এসময় প্রতিরোধ করতে গেলেই হাতির দল তাদের ওপর চড়াও হয়। এমনকি বাড়িঘরে হামলা চালায়।

সরেজমিনে ঘুরে জানাগেছে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে এবং পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য, বঞ্চনা তাদের নিত্যসঙ্গী। এর ওপর প্রায় বন্যহাতির আক্রমনে দিশেহারা করে দিয়েছে তাদের। হাতির আতংকে এমনিতে অনেক জমি পতিত থাকছে। ঝুঁকি নিয়ে আবাদ করলেও সে ফসল তারা ঘরে তুলতে পারছে না। ফলে পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলো হাতির সাথে যুদ্ধ করে করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তাই বন্যহাতির সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সীমান্তবাসী।

এ ব্যাপারে কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, হাতিই এ অঞ্চলের মানুষের বড় সমস্যা। হাতির ভয়ে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাতি কখন কোথায় আক্রমন চালায় তা বলা মুশকিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads