• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কালিয়াকৈরে এক মাসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত ২, গ্রেপ্তার ৫

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

কালিয়াকৈরে এক মাসে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত ২, গ্রেপ্তার ৫

  • প্রকাশিত ১২ মে ২০২০

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য হয়েছে উঠেছে। করোনার মহামারি শুরুর প্রথম থেকেই তিনটি গ্রুপের ভয়ংকর ছিনতাইকারী সদস্যরা মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। করোনার পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখনই তিনটি গ্রুপের ভয়ংকর ছিনতাইকারীর প্রায় ১৫-২০ জনের সদস্যরা নিরাপদে ছিনতাই করে পার পেয়ে যাচ্ছিল।

তিনটি গ্রুপের ভয়ংকর ছিনতাইকারীর সদস্যরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কয়েকটি নিরাপদ পয়েন্টে গত এক মাসে শতাধিক যানবাহন, ব্যক্তির কাছ থেকে ছিনতাই করে নগদ অর্থ মালামাল, মোবাইল, স্বণের চেইনসহ মূল্যবান জিনিস ছিনতাই করে চম্পট দিয়েছে। ছিনতাইয়ের সময়ে কেউ টাকা পয়সা, মালামাল, জিনিসপত্র জোরাজুরি করলে তাদেরকে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করেছে।

গত এপ্রিল মাসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে মির্জাপুরের গোড়াই নামক এলাকায় দুই গ্রুপের ছিনতাকাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুই জন নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় পৃথক দুইটি হত্যা মামলা হলে পুলিশের টনক পড়ে। কালিয়াকৈর থানার একদল চৌকস পুলিশ সদস্য গত কয়েকদিনে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী দলের ভয়ংকর পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- উপজেলার চাপাইর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ছিনতাইকারী গ্রুপের লিডার তামিম হোসেন (২৪),একই উপজেলার উত্তর হিজলতলী গ্রামের মাসুম রানার ছেলে ইকবাল হোসেন প্রিন্স(৩০),একই একই উপজেলার কুতুবদিয়া গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে মাসুদ (২২), একই উপজেলার আশাপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সজল(২২) ও সুমন মিয়া (৩২) টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার কামাফাবাড়ী এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে। এদের মধ্যে ইকবাল হোসেন প্রিন্স ও সজল গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। অপর ৩ জনকে গাজীপুর জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এর আগে, গত ১ মে এসআই ভজন চন্দ্র রায় অপর আরেকটি গ্রুপের ভয়ংকর ছিনতাইকারীর সদস্য রাজা মিয়া, রঞ্জু মিয়া ও রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। তবে এই তিনছিনতাইকারী রফিকুল ইসলাম নামের এক প্রাইভেটকার আরোহিকে খুনের কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানান।

কালিয়াকৈর থানার এসআই আব্দুল হাকিম ও মনিরুজ্জামান মনির জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে এ মহাসড়কে ছিনতাইতাই করে আসছিলো। নগদ টাকা, মোটরসাইকেলসহ যানবাহনের মুল্যবান জিনিসপত্র ভয়ভীতি দেখিয়ে লুট করে নিয়ে যেত। একটি মোটর সাইকেল ছিনতাই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলাকার তিনটি গ্রুপের মধ্যে দুইটি গ্রুপের ভয়ংকর ছিনতাইকারীর সদস্য আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ,ভুক্তভোগি ও অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভয়ংকর ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে গত এপ্রিল মাসে দুইজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ১২ এপ্রিল রাতে হত্যা করা হয় বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার করমজা গ্রামের মৃত রমজান আলী মন্ডলের ছেলে রাশেদ মিয়াকে (১৮)। 

বাবার হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যাওয়া খবর শুনে রাশেদ মিয়া টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে রাত ১০টার দিকে রওনা দেন গ্রামের বাড়ীর উদ্যোশে। কিছুদুর অটো রিকশায় আবার কিছুদুর পায়ে হেটে যেতে থাকে রাশেদ। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় আসান পর উত্তরাঞ্চলের কোনো যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেটেই রওনা দেন রাশেদ।  পায়ে হেটে যাওয়ার পর মাকিষ বাথান এলাকায় যাওয়ার পর রাশেদ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে সব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাকে উপযুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পরে লাশ একটি ড্রেনের নীচে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

সকালে খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের আত্নীয় লিবন মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

অপরদিকে ২৬ মার্চ ভোরে টাঙ্গাইল থেকে গাজীপুর যাওয়ার পথে খাড়াজোড়া গোয়ালবাথান ফ্লাইওভার এলাকায় ছিনতাইবকারীর কবলে পড়েন এক প্রাইভেটকার আরোহী।  ভোর ৪টার দিকে পাশের জঙ্গল থেকে  তিন ছিনতাইকারী প্রাইভেটকারের জানালা দিয়ে আরোহীর পেটের বাম পাশে রক্তাক্ত জখম করে মোবাইল সেট নিয়ে যায়। পরে তাকে কালিয়াকৈর থানার এস আই ভজন চন্দ্র রায় উপজেলা হাসপাতাল ও পরে শেখ ফজিলাতুনেছা হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ এপ্রিল বিকেলে মারা যান।

গত ৪ এপ্রিল রাত সোয়া আটটার দিকে খাড়াজোড়া রেলওভার ব্রীজে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন  মোটর সাইকেল চালক। সেখানে তিনজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল গতিরোধ করে। পরে চালকের গলায় ধারালো চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে কিল ঘুষি ও থাপ্পর মেরে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।  পর দিন এ ঘটনায় আবু তাহের থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তৎপর হয়। পুলিশ গত বুধবার ইকবাল হোসেন প্রিন্সকে মোটরসাইকেলসহ আটক করে। 

কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, করোনার কারণে পুলিশ মানুষকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়ে উঠে। আমরা দুইটি গ্রুটের আট সদস্যকে গ্রেপ্তর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি।ওই সড়কে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads