• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাপ ভাইয়ের কবরের ওপরই মিরজানের খুপড়ি ঘর

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

বাপ ভাইয়ের কবরের ওপরই মিরজানের খুপড়ি ঘর

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০২০

মিরজান বিবি। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই।  তবুও শরীরে বেশ কর্মশক্তি বিদ্যমান। অন্যের বাড়ি বাড়ি কাজ করে দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগারেই দিন পার করেন এ অসহায় নারী।  স্বামী দশ বছর আগেই তাকে ফেলে চলে গেছেন। সেই থেকেই অভাব স্থায়ী বাসা বাঁধে তার খুপড়ি ঘরে।  শীতে থরথর কাঁপুনি আর বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে শরীর ভিজে বছরের পর বছর। খাদ্যভাব শরীর অসুস্থ তবুও অন্যের কাছে হাত পেতে ভিক্ষার পথে হাঁটেননি তিনি। তবে গা খাটিয়ে খাদ্যভাবের কুলকিনারা করতে পারলেও মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই করতে পারেনি অসহায় এ নারী। নিরুপায় হয়ে বাবা ভাইয়ের কবরের ওপরই পলিথিন প্যাঁচিয়ে  মাথা গোজার একটি ঠাঁই করেছেন তিনি। আছে একটি খুপড়ি ঘর। কবরের ভিতরে বাপ ভাই  ঘুমায় আর ওপরে ঘুমান অসহায় মিরজান বিবি।  নিদারুন কষ্টে দিনানিপাত করলেও সরকারের কোনো কর্তা জনপ্রতিনিধির নজর পড়েনি ওই নারীর পলিথিন মুড়ানো খুপড়ি ঘরে। খাদ্য যোগার হলে পেটে পড়ে, না  হলে উপোষ কাটে দিনরাত।

এমনই মানবেতর জীবন যাপন করছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাইদ মধ্য পাড়া গ্রামের মৃত মিয়া চাঁন বেপারির মেয়ে মিরজান বিবি (৫০)। মহামারি করোনা কালেও তার খুপড়ি ঘরে পৌঁছেনি কোনো ত্রাণ সাহায্যের প্যাকেট। 

মিরজান বিবি জানান, অন্যের ঘর দুয়ার ধুয়ে মুছে ঝাড়ু দিয়ে দু-মুঠো খাবার যোগার করতেই আমার জীবন চলছে ধুকেধুকে। স্বামী নাই। বাবা মারা গেছে অনেক দিন আগেই।  ভাই বোনও কেউ বেঁচে নেই। কোনো জমিজিরাতও নাই। তাই বাবা আর ভাইয়ের কয়বর (কবর) দেওয়া জমিতেই ছোট ঘর বানিয়ে আছি।

তিনি বলেন, এ জায়গাটুকু আমার অংশীদারিত্ব হিসাবে দিয়েছিল। সবাই মারা গেছে।  এখন কয়বরের (কবর) ভিত্তে ঘুমায় বাপ ভাই আর আমি ঘুমাই ওপরে। সবাই কয়বর দেখলে ডরে দুরে থাকে। আর আমি কয়বরের (কবর) ওপরেই রাত দিন মিলিয়ে জীবন পার করতাছি।

তিনি আরো বলেন, অনেকবার চেয়ারম্যান মেম্বরের (মেম্বার) কাছে গেছি কোনো ব্যবস্থা করেনি। বেশি যাই বলে চেয়ারম্যান মেম্বররা দুরদুর করে খেদাইয়া দিছে। এ করোনা কালেও কোনো সাহায্য পাইছি না গো বাপ। 

স্থানীয় শিক্ষার্থী ইয়াছিন আহম্মেদ রানা বলেন, খুবই অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন মিরজান বিবি। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে তবুও ভিক্ষা করেন না তিনি। ঘরে কিছু থাকলে খায় না থাকলে উপোষ কাটে তার। তিনি আমাদের বাড়িতেও কাজ করেন। আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাজের সম্মানি দেওয়ার চেষ্টা করি। সরকার বা ভিত্তবান তার পাশে দাঁড়ানো উচিত।  বয়স্ক অসহায় একজন নারীর এমন মানবেতর জীবন যাপন আমাদের জন্য লজ্জাকর।

ছাত্রলীগ নেতা রাহাত আকন্দ বলেন এ গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতেই কোনো না কোনো সময় কাজ করেন তিনি। অনেক যুব সমাজ নিজ উদ্যোগে যত সামান্য সহায়তা করে থাকে। তবে সরকারি বরাদ্দ বা বিত্তবানের সহায়তায় তাঁর একটা থাকার ঘর হলে এ মানবেতর জীবন যাপন থেকে রেহাই পেতেন  এ অসহায় নারী।

কাওরাইদ ইউনিয়েনর  ৩ ওয়ার্ড সদস্য  আবদুস সামাদ মিরধা বলেন, গোরস্থানেই তার বসবাস। স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে সে এখানে পড়ে আছে। তাকে সহায়তা করা হয়েছে। সে এত মানবেতর জীবনযাপন করছে তা জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানলাম। দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে তার ঘরের ব্যবস্থাও করা হবে।

sripur 2গাজীপুর জেলা প্রসাশক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই তার গৃহ নির্মাণ করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। তার যদি অল্প পরিমাণ (বাড়ি করার মত) জমিও থাকে তার জন্য বাসস্থান করে দেওয়া হবে। যদি নিজস্ব কোনো জমিই না থাকে তবে তাকে গুচ্ছগ্রামে প্লট দেওয়া হবে ও বাড়ি নির্মাণ করে দেওয় হবে। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট  ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads