• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
লৌহজংয়ে বেঁদে পল্লীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, মৃ্ত্যুর সঙ্গে লড়ছে আরো এক নারী

ফাইল ছবি

সারা দেশ

লৌহজংয়ে বেঁদে পল্লীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, মৃ্ত্যুর সঙ্গে লড়ছে আরো এক নারী

  • লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০২০

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গোয়ালীমান্দ্রা বেঁদে পল্লীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর এখন আরো এক মহিলা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বেঁদে পল্লীতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার এ খবর কিছু অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ হবার পরে বৃহস্পতিবার টনক নড়েছে উপজেলা প্রশাসনের। দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে বেঁদে পল্লীতে।

সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাবিরুল ইসলাম খানের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মু. রাশেদুজ্জামান, লৌহজং থানার ওসি মো. আলমগীর হোসাইন স্থানীয় হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. মোজাম্মেল হককে সাথে নিয়ে গোয়ালীমান্দ্রার বেঁদে পল্লীতে ছুটে যান।

তারা বেঁদে সর্দারদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করে মৃত দুই ব্যক্তির বাড়িসহ মৃতপ্রায় সুরাতুন নেছার বাড়ি লক ডাউন করেন। ওই তিন ফ্যামিলিকে বাড়ির বাইরে আসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুরাতুন নেছার সোয়াব সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেঁদেদের অবাধ চলাফেরায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. মোজাম্মেল হক জানান, বেঁদেদের করোনা সচেতনতার জন্য আমরা সেখানে ছুটে যাই। তাদের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করি।

লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন জানান, ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে বেঁদে পল্লীতে যাই। সেখানে বৈঠক করে তিনটি পরিবারকে লক ডাউন করার ব্যবস্থা করি। যে দুই ব্যক্তি ইতিমধ্যে মারা গেছে তাদের মধ্যে করোনার উপসর্গ ছিল। এছাড়া এখনও দুই ব্যক্তির মধ্যে করোনা উপসর্গ রয়েছে। এর বাইরেও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থাকতে পারে।
লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মু. রাশেদুজ্জামান জানান, সাময়িকভাবে ৩টি বাড়ী লকডাউন করা হয়েছে। করোনায় পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাবিরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মু. রাশেদুজ্জামান, লৌহজং থানার ওসি মো. আলমগীর হোসাইন ও স্থানীয় হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হককে পাঠিয়ে তিনটি বাড়ি লক ডাউনের ব্যবস্থা করি। ওই তিনটি পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যাতে তাদের খাবারের জন্য বাইরে আসতে না হয়। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বেঁদেদের করোনা সোয়ার সংগ্রহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা ইতিমধ্যে বেঁদে পল্লীতে করোনার সোয়াব সংগ্রহ করছে।

এর আগে, গত বুধবার আলতাফ হোসেন (৭০) নামে গোয়ালীমান্দ্রা বেঁদে পল্লীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছে। এর পূর্বে গত ২৪ মে ঈদের পূর্বের দিন তার ভাই সিরাজ উদ্দিনও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাবার খবর পাওয়া যায়। তবে তথ্য গোপন করে এ ব্যক্তিদের লাশ সাতঘড়িয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। প্রশাসনকেও এ ব্যাপরে কিছু জানানো হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কারো করোনা হলে এ বিষয়ে প্রশাসনকে না জানানোর জন্য বেঁদে সর্দারদের কড়াকড়ি নির্দেশ আছে। যদি কেউ প্রশাসনকে জানায়, তবে মোটা অংকের জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে বেঁদে পল্লীর রীতি অনুযায়ী। তবে এরকম কথা অস্বীকার করেছে বেঁদে পল্লীর লোকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেঁদে সম্প্রদায়ের অনেকেই স্বীকার করেছে আলতাফ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। এছাড়া বেঁদে পল্লীতে অনেকেরই করোনা উপসর্গ রয়েছে।

এদিকে স্থানীরা জানায়, বেঁদে পল্লীতে অনেকেইর করোনা রয়েছে। কিন্তু তারা তথ্য গোপন করছে। করোনা পরীক্ষা করাতেও তারা স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতা নেয় না। উপসর্গ নিয়েই তারা স্থানীয় হাট বাজারে ঘোরাফেরা করছে। এমনকি তারা মাক্সও ব্যবহার করতে চায়না। তাই স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads