• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মুখ দিয়ে লিখে পাস করলেন মাসুদুর রহমান

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

মুখ দিয়ে লিখে পাস করলেন মাসুদুর রহমান

  • দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০২০

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করলেন মাসুদুর রহমান লাদেন । শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল নিয়ে পাস করেছেন তিনি।

উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের নাগেরগাতী গ্রামের সাহেব আলীর দ্বিতীয় পত্র লাদেন । জন্ম থেকেই তার দুই হাতের কব্জি নেই । ফলে আর পাঁচটা ছেলে মেয়ে থেকে কিছুটা ভিন্ন লাদেন ।

ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ । হাত নেই তাই অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ালেখা করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে তার। তবে শেষ পর্যন্ত ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই বিদ্যালয়ে ভর্তি হন লাদেন । শুরুতে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে পা এর পরিবর্তে মুখ দিয়ে লেখা শুরু করেন তিনি। একটু একটু করে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়ে ভর্তি হন মাধ্যমিকে ।

এবছর উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন লাদেন। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে মানবিক বিভাগের এই ছাত্র প্রতিটি পরীক্ষায় আত্মনির্ভরতা ও ইচ্ছা শক্তির কাজে লাগান তিনি । আজ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর ৩.৬৭ জিপিএ নিয়ে উত্তীর্ণ হন লাদেন ।

শুধু পড়ালেখা নয় খেলাধুলায়ও নাম রয়েছে লাদেনের । পাড়ার ছেলেদের সাথে বিকেল হলেই মাঠে ছুটে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলতে । হাতের কব্জি নেই তাতে কি। যতটুকুই বা আছে তার ওপর ভর করেই চার ছয় মেরে অনেক খেলায় জিতেছেন তিনি ।

তারা এই জয়ে মা-বাবাসহ আনন্দের বন্যা বইছে পুরো গ্রাম জুড়ে । দূর দূরান্ত থেকে অনেকই আসছেন তাকে শুভ কামনা জানাতে । এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তার পথ চলার এই গল্প । ফল প্রকাশের পর থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী পুলিশ সুপার দুর্গাপুর সার্কেল, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব সহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়েছেন ।

মাসুদুর রহমান লাবিন জানান, মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে সুন্দরভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম । তারই ফলশ্রুতি আজ এরকম একটি ভাল রেজাল্ট করতে পেরেছি । আর এই পথ চলায় প্রতিনিয়ত বাবা-মা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা সাহস যুগিয়েছে । তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহের ফলে আমি আজ এতদূর চলতে পেরেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করতে পারি ।

লাদেনের পিতা সাহেব আলী জানান, ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল লাদেনের । কিন্তু জন্ম থেকেই তার দুটি হাতের কব্জি না থাকায় আমরা অনেকটা চিন্তিত ছিলাম তাকে নিয়ে । অনেকেই অনেক কিছু বলেছে আমার ছেলে নাকি পড়াশোনা করতে পারবে না । তারপরও নিজের আত্মবিশ্বাস উপর নির্ভর করেই আজ এতদূর আসতে পেরেছে। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে । আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমার ছেলে যেন ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু আপনাদের উপহার দিতে পারে এ প্রত্যাশা রাখবেন ।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম জানান, তার এই ফলাফলে পুরো উপজেলাবাসী অনেক খুশি হয়েছেন । আমরা তাকে অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি যেন আগামীর পথ চলা আরো সুন্দর হয় । সেই সাথে তার ও তার পরিবারের জন্য সরকারি অর্থায়নে একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে । পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন তাকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা করবে ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads