• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
টেকনাফের দু’হাজার ডিঙি নৌকার জেলেরা সাগর উপকূলে মাছ ধরতে চায়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

টেকনাফের দু’হাজার ডিঙি নৌকার জেলেরা সাগর উপকূলে মাছ ধরতে চায়

  • টেকনাফ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ জুন ২০২০

বঙ্গোপসাগরের উপকূলের কাছাকাছি থেকে মাছ ধরতে চায় জেলেরা। ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সরকার সামুদ্রিক মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় বিপাকে পড়েছে তারা। এমন পরিস্থিতে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দূর্দিন যাচ্ছে জেলে পরিবারৃগুলোতে। যদিও বা প্রতিজন জেলের জন্য ৫৬ কেজি ভিজিএফ চাল বরাকরেছে।  তারপরও আর্থিক টানাপোড়েন চলছে সাধারণ জেলে পরিবার গুলোর মধ্যে। তাই জীবন জীবিকার তাগিদে তারা সাগর উপকূলে মাছ ধরতে চায়। এমন সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন টেকনাফ এলাকার ম]ৎস্যজীবি প্রতিনিধিরা।  গত মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন টেকনাফ ক্ষুদ্র নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি ও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নূর মোহাম্মদ গণি, সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ, নৌকা মালিক ফিরোজ আহম্মদ ও বশির আহমদ প্রমুখ।

এতে নৌকা মালিকরা দাবী করেছেন, গভীর সাগরে বড় বড় ট্রলারযোগে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরা বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে যে আইন তৈরি হয়েছে তা এখন ছোট ছোট ডিঙি নৌকার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে মৎস্য খাতে জড়িত টেকনাফের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে সরকার গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা দেয়। সারা দেশের মত কক্সবাজারের উপজেলা টেকনাফেও তা কার্যকর হচ্ছে। টেকনাফে প্রায় দু’ হাজার ডিঙি নৌকা রয়েছে। টেকনাফে জেলেরা যে নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন-তা আকারে খুবই ছোট। স্থানীয়ভাষায় এই নৌকাকে বলা হয় ‘টাওঙ্গা নৌকা’। এই নৌকা কোনোভাবেই গভীর সাগরে যেতে পারে না। উপকূলের কাছাকাছি সকালে গিয়ে মাছ ধরে দুপুরের পরে ফিরে আসে। এসব নৌকায় ধরা হয় লইট্যা, ফাইষ্যা, পোপা, ছুরি ইত্যাদি ছোট মাছ। এ নৌকায় কখনোই ইলিশসহ সামুদ্রিক বড় মাছ ধরা হয় না।

৬৫ দিন মাছ ধরার বন্ধ রাখার সরকারি আদেশে টেকনাফের দুই হাজার ডিঙি নৌকার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত অন্তত ৫০ হাজার মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।এসব জেলে পরিবারে চলছে হাহাকার। অনেক পরিবারে একবেলা খাবারও যোগাড় হচ্ছে না। মিয়ানমার সীমান্ত , নাফনদী ও সাগর দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মানবপাচার ও ইয়াবাসহ মাদক পাচারের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় সরকারী আর এক আদেশে গত তিন বছর ধরে স্থানীয় জেলেরা নাফনদী ও সাগরে মাছ ধরতে পারছে না।

এর উপর ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধের আদেশে জেলে পরিবারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাই বিপর্যয় রোধে ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধের আদেশ পুনর্বিবেচনা করাটা এখন সময়ের দাবী।

প্রতি বছর আশ্বিন মাসের প্রথম তারিখ থেকে ২২ দিন ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম হিসাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এতে জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ  হলেও টেকনাফের জেলেরা এই সিদ্ধান্ত মেনে চলেন। কিন্তু ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা টেকনাফের জেলেদের জন্য অমানবিক।

স্বারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় ,  গভীর সাগরে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ আহরণ করছে বিভিন্ন ট্রলিং জাহাজ। এসব ট্রলিং জাল ও বড় ট্রলারের ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখতে সরকার ২০১৫ সালের ২০ মে আইন করে একটি গেজেট প্রকাশ করে। এই গেজেটের আদেশ মূলত ছোট নৌকার জন্য প্রযোজ্য নয়। এখন ছোট নৌকার উপর এই আইন কার্যকর করায় টেকনাফের হাজার হাজার জেলে পরিবারের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অনাহারে দিন কাটাচ্ছে নৌকার মালিক ও জেলে পরিবার।

নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ গনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বাংলাদেশকেও স্থবির করে দিয়েছে। অন্যদিকে মাদক চোরাচালান বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক টেকনাফে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় টেকনাফের মানুষ বর্তমানে যখন অবৈধ পথ পরিহার করে বৈধ পথে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে টেকনাফের এক-চতুর্থাংশ মানুষ দীর্ঘ ৬৫ দিন মাছ ধরতে না পারলে তাদের জীবনের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।’

ইতিমধ্যে টেকনাফ উপজেলা  প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরেও তারা সমিতির পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা ছাড়াও তিনি এ বিষয়ে  প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারী আদেশে সামুদ্রিক মাছ দরা বন্ধ রয়েছে ৬৫ দিন। কেউ আদেশ না মেনে মাছ আহরন করতে গেলে র্টাস্কর্ফোস’র মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে তা কার্যকর করা হচ্ছে। এ ছাড়া টেকনাফে আট হাজারের কিছু কম তালিকা ভূক্ত জেলে রয়েছে। এসব জেলেদেও জন্য সরকারী ভাবে বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে। ’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads