• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শ্রীপুর সাফারি পার্ক: টিংকু বলে ডাকলেই সাড়া দেয় ভল্লুক শাবক

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

শ্রীপুর সাফারি পার্ক: টিংকু বলে ডাকলেই সাড়া দেয় ভল্লুক শাবক

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ৩০ জুন ২০২০

শাবক জন্মের পর বহুদিন গর্তে লুকিয়ে ছিল মা ভল্লুকটি।  এ দিকে মা ভল্লুকটির দুটি চোখই প্রায় অন্ধ। শাবককে নিয়ে গভীর গর্তে বসবাস করতে লাগল মা ভল্লুক। কয়েক দিন পরেই শাবকের কান্না শুনতে পায় কর্তৃপক্ষ। পরে দ্রুত শাবক ও মা ভল্লুকের গর্তেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সময় করে দু'বেলা করে গর্তের ভেতরেই খাবার দেওয়া শুরু হলো। মা ভল্লুকটি অন্ধ বলে সহজেই গর্তের কাছে গিয়ে পার্কের লোকজন খাবার দিতে পারত।

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো এশিয়াটিক ব্ল্যাক ভল্লুকের এক শাবক জন্ম নিল। দেশে ক্যাপটিভেও এটাই প্রথম ভল্লুক শাবকের জন্ম। এ নিয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ বেশ খুশি। 

শাবক ও মা ভল্লুকের আলাদা যত্ন বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এটা জন্মের সেই সময়ের কথা। এখন সেই ভল্লুক শাবকটি বেশ চালাক আর চতুর হয়েছে।

শাবক ও ভল্লুকদের দেখবালের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট সাইফুল  ইসলাম ভল্লুক শাকবের নাম দিল টিংকু।

এখন টিংকু বলে ডাকলেই মাকে নিয়ে খাবার খেতে হাজির হয় ভল্লুক শাবকটি। এ সময় প্রায় অন্ধ মা ভল্লুকটিও  শাবকের সাথে খাবার খেতে আসে।

পার্ক সূত্রে জানাযায় গত বছরের ডিসেম্বরে একটি নারী ভল্লুক গর্তের ভিতরে অবস্থান নেয়। আগে থেকেই ধারনা করা হচ্ছিল এ নারী ভল্লুকটি গর্ভবতী। বাচ্ছা প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় সে হয়ত গর্তে অবস্থান  নেয়। তবে মা ভল্লুকটি প্রায় অন্ধ বলে শাবক জন্ম দেওয়া ও লালন পালনে শঙ্কা তৈরি হয়। পরে ডিসেম্বরের শেষের দিকে গর্তের ভিতরেই একটি শাকবের জন্ম হয়।  জন্মের চার পাঁচদিন পরে সবার নজরে আসে ভল্লুক শাবক জন্মের বিষয়টি। এর পর থেকে নিয়ম করে মা ও শাবকের খাবার দেওয়া হত গর্তের ভিতরেই।

দেখভালের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, মা ভল্লুকটি চোখে খুবই কম দেখে।  বাচ্চাটিকে নিয়ে আলাদা বেষ্টনীতে ঘুরেফিরে চলে মা। খাবারের সময় হলে টিংকু বলে ডাক দিলেই  শাবকটি সারা দেয়। ডাক শুনে শাবকটি মাকে নিয়ে খাবারের ঘরে আসে। তবে খুব সর্তক ভাবে খাবারের ঘরে ঢুকে শাবক টিংকু। ভল্লুক শাবক টিংকু খুবই চতুর আর চালাক হয়েছে। তিনি বলেন আমিই টিংকু বলে ডাকতে শুরু করি। এখন সবাই ডাকে। এখন টিংকু বলে ডাকলে সে বুঝে। ডাক শুনে কান খাড়া করে সারা দেয় ডাকে।

অপর ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট থুইচিং মং মারমা জানান, সময় করে প্রতিদিন ভল্লুকদের খাবার দেওয়া হয়। ভল্লুকের জন্য গাজর, আপেল,কমলা,মালটা,মিষ্টি কুমড়াসহ বেশ কিছু খাবারের তালিকা রয়েছে। মিষ্টি কুমড়া ও মালটা খুবই পছন্দ করে ভল্লুকরা।

পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন খান জানান, পার্কে জন্ম নেওয়া ভল্লুক শাবকটি পুরুষ। এ নিয়ে পার্কে ১৩ টি ভল্লুক রয়েছে। এদের মধ্যে বাচ্চাসহ পাঁচটি পুরুষ ভল্লুক বাকী আটটি নারী। এরা এশিয়াটিক ব্ল্যাক ভল্লুক প্রজাতির। এশিয়াতে আরো বেশ কয়েক প্রজাতির ভল্লুকের বসবাস রয়েছে। এদের মধ্যে শ্লোথ বেয়ার ও মালয়নসান বেয়ার অন্যতম। পার্কের সবগুলো ভল্লুকই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে পার্কে রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এখন মা ভল্লুক ও শাবকটি মিনিয়াম এনকোজারে রাখা হয়েছে। নিয়মিত যারা তাদের (ওয়াইল্ড স্কাউটরা) দেখবাল করে তাদের সাথে ভাল সখ্যতা গড়ে উঠেছে শাবকটির। তারা ওর নাম দিয়েছে টিংকু। টিংকু বলে ডাকলে সায় দেয়। কান খাড়া করে। খাবারের সময় স্কাউটরা টিংকু বলে ডাকতেই খাবারের ঘরে মাকে নিয়ে হাজির হয় ভল্লুক শাবকটি। মা ভল্লুকটি চোখে অনেক কম দেখে। টিংকু বলে ডাকতেই মাকে নিয়ে সহজেই খাবারের ঘরে চলে আসে  ভল্লুক শাবকটি । 

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান বলেন, পার্কে এটিই প্রথম ভল্লুক শাবকের জন্ম।  এটি এশিয়াটিক ব্ল্যাক ভল্লুক প্রজাতি। জন্মের পর থেকেই আলাদা যত্নে বেড়ে উঠে শাবকটি। বেশ কিছু সময় ভল্লুক বেষ্টনীর ভিতরে একটি গর্তে শাবককে নিয়ে অবস্থান করেছিল মা ভল্লুক। ভল্লুকটি প্রায় অন্ধ বলে শঙ্কায় ছিলাম। সারাদিন মায়ের সাথে দুরন্তপনা আর খুনসুটিতে কাটে শাবকের সময়। সময় মত খাবার খেতে আসে শাবক ও মা ভল্লুকটি। মা ও শাবকটি সুস্থ্য  সবল রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads