• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বিজয় হত্যাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

বিজয় হত্যাকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০২০

সিরাজগঞ্জে জেলা ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। দলীয় কোন্দলের কারণে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শোক সভায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ পুরো শহরসহ খেদন সর্দারের মোড় ও বড়পুল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুলহকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়িয়ে। শহরের দোকানপাট মূহুর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ জানান, জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে নিহত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে শহরের এসএস রোডের দলীয় কার্যালয়ে শান্তিপুর্ন শোকসভা চলছিল। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সুর্য্য, এ্যাড বিমল কুমার দাসসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা চলাকালে জানতে পারি দলীয় কার্যালয়ের বাইরে গন্ডগোল হচ্ছে। পরে বাইরে গিয়ে দেখি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল হকের নেতৃত্বে প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী স্মরণসভায় হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। এসময় বাঁধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। তিনি জানান,তাদের হামলায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নাঈম, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জুবায়ের, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদসহ অন্তত ৩৫জন আহত হয়েছে।

অন্যদিকে, আহত যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুলের পক্ষে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শেখ সাইফুল্লাহ সাদি ও সুজিত রায় জানান, শোকসভায় যোগ দেয়ার জন্য দলীয় কার্যালয়ে যাবার আগেই জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ গ্রুপ অতর্কিত হামলা চালায়। এতে যুবলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল হকসহ অন্তত ২৫/২০ জন আহত হয়। এর মধ্যে একরামুলের অবস্থা গুরুত্বর। তারা আরো জানান, হামলাকারীরা শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীর নয় বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ছিল।

ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা জানান, প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে শোক সভায় যোগদানের জন্য দলীয় কার্যালয়ে ঢুকছিলাম। এ সময় সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদের সমর্থকরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে বাঁধা দেয় এবং হামলা চালায়।

স্মরণ সভায় উপস্থিতি থাকা জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য জানান, এনামুল হক বিজয়ের স্মরণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল চলছিল। সেখানে জেলার সভাপতিসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এঅবস্থায় ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবীব খোকার নেতৃত্বে দু’ আড়াইশো লোকজন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে হামলা চালায়। যে কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না জানান, ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়ের স্মরন সভায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজন প্রোগ্রাম বানচাল করার জন্য জেলা ছাত্রলীগক সভাপতিসহ নেতাকর্মীকে প্রোগামে যেতে বাধা দেয়। এনিয়ে বাধাদানকারী ওই ছাত্রলীগ নামধারীরা শহরের দোকানপাট ও বসতভিটা ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এর সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস জানান, শোকসভা চলাকালে ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করছিল। এ সময় সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহমেদ গ্রুপের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয়কে হত্যার জন্য তারপক্ষের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশে বাঁধা দেয়। এনিয়ে সংঘর্ষ সুত্রপাত হয়। তাৎক্ষনিক শহরের পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে এ জন্য প্রশাসনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফোরকান শিকদার বলেন, জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত স্মরণ সভা চলাকালে একাংশের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার সময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ক্রমশ তা শহরের মেছুয়া বাজার, খেদন সর্দারের মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন টহল জোরদার করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads