• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কক্সবাজারে কোরবানি পশুর চাহিদা ৯৫ হাজার, মজুদ ১ লাখ ৫৫০ পশু

ফাইল ছবি

সারা দেশ

কক্সবাজারে কোরবানি পশুর চাহিদা ৯৫ হাজার, মজুদ ১ লাখ ৫৫০ পশু

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০২০

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই অথবা ১ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও শুরু হয়ে গেছে কোরবানির পশুর হিসাব নিকাশ। তবে দেশে করোনা সংকটের কারনে পশু ক্রেতা বিক্রেতা সবার মাঝে চিন্তার ছাপ ফেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা খামারে গরু মোটাতাজাকরণ অনেকটা শেষ পর্যায়ে, তারা এখন শেষ মুহুর্তে গরুকে দেখতে সুন্দর করার চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, এবারে কক্সবাজার জেলা কোরবানির পশুর চাহিদা ৯৫ হাজার ১৮৮টি। যা গত বছরে চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কম। আর জেলায় স্থানীয়ভাবে মজুদ আছে ১ লাখ ৫৫০টি পশু। তাই কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে মনে করছেন এই দপ্তরের কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম জানান, দেশে চলমান করোনা সংকটের মধ্যেও ইতোমধ্যে কোরবানির পশু নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মপরিকল্পনা চলছে। কক্সবাজারের জেলার জন্য চলতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা (গরু,ছাগল, ভেড়া, মহিষ) ইত্যাদি ৯৫ হাজার ১৮৮টি । তবে আমরা আনন্দের সাথে জানাতে চাই, কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৫৫০টি পশু মজুদ আছে। এটা যারা ২টির বেশি গরু পালন করেছে এমন খামীদের হিসাবে। এছাড়া শুধুমাত্র ১টি গরু মোটাতাজা করেছে কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য এরকম গরু কমপক্ষে ১৫ হাজার হবে। হয়তো আরো বেশি হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে চলতি বছর ৫৬টি কোরবানির পশুর বাজার বসবে। পশুর রোগ বালাই দেখতে প্রতিটি উপজেলা কমপক্ষে ২টি মেডিকেল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। এদিকে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে অনেকে গরু মোটাতাজা করেছে।

তবে করোনা সংকটের কারণে মানুষের আর্থিক সঙ্গতি কমে যাওয়া গরু বিক্রি হবে কি না সে চিন্তায় পড়েছে খামারীরা। আলাপকালে পিএমখালী ঘাটকুলিয়াপাড়ার শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন বলেন,আমার নিজের ঘরে ২টি গরু মোটাতাজা করেছি। আশা করছি এবারের কোরবানির ঈদ বাজারে সেগুলো কমপক্ষে ৮০ হাজার টাকার উপরে প্রতিটি বিক্রি করার চিন্তা আছে। তবে এখন সমস্যা হচ্ছে গরুগুলো বেশি পাহারা দিতে হয়। কারণ প্রতি বছর কোরবানির সময় আসলে গরু চোরের উপদ্রব বেড়ে যায়। আর একবার গরু চুরি হলে সেটা আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

পিএমখালী ডিকপাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের ঘরে ৩টি গরু লালন পালন করেছি। এছাড়া সম্প্রতি টেকনাফ থেকে আরো ৩টি কিনেছি সেগুলো এখন ভাল করে পরিচর্যা করছি। আশা করছি কোরবানির ঈদের বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা বাড়তি আয় করতে পারব। তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে গরুর দাম পাওয়া কঠিন হবে- কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। তাছাড়া এখন সব কিছুর দাম বাড়তি আগে গুরুর খাদ্য, ওষুধ,চিকিৎসা সব কিছু কম মূল্যে পাওয়া যেত। কিন্ত এখন সব কিছুর দাম দ্বিগুণ বা ৩ গুণ হয়ে গেছে তাই গরু পালন করা খুব মুশকিল। এছাড়া আগে গ্রামেগঞ্জে ঘাষ বা বিলে গুরুর খাদ্য থাকত, এখন সে গুলো আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে ফলে গরু পালন করতে খরচ বেশি পড়ে।

চকরিয়া শাহারবিল এলাকার মৌলানা আবদুর রহমান বলেন, আমার ঘরে ৩টি গরু আছে যে গুলো গত বছর থেকে আমি কোরবানির জন্য পরিচর্যা করে আসছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কারণে আদৌ গরুগুলো বিক্রি করতে পারবো কি না জানি না। 

এদিকে আসন্ন কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক আজিম উদ্দিন বলেন, ঈদ মানে আনন্দ বিশেষ করে কোরবানির ঈদের মূল আকর্ষণ গরু কেনা নিয়ে। তবে এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে রোজার ঈদেও কোনো আনন্দ করতে পারেনি পরিবারের কেউ আর এবারও মনে হয় না আগের মত আনন্দ করতে পারবে। কারণ সবার ভেতরে আতংক বিরাজ করছে। আর ৪ মাস কর্মহীন হয়ে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

টেকপাড়ার ওসমান গনি পুতু বলেন,আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। আমার এক ভাই করোনা পজিটিভ হওয়াতে অফিস থেকে ৩ মাস আগে আমাকে অফিসে না যেতে বলে দিয়েছে। এখন চুডান্তভাবে চাকরি চলে গেছে। ঠিকমত ৩ বেলা খেতে পারছিেনা কোরবানি করবো কিভাবে। একই এলাকার শাহেদ বলেন,আমি একটি পরিবহণ কোম্পানিতে কাউন্টারে চাকরী করি ।৭ মাস ধরে বেতন দিচ্ছে না। সে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কষ্টে আছি কোরবানি কিভাবে করবো আগে কমপক্ষে ২ ভাগ কোরবানি দিতাম।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে অনলাইনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গরু বিক্রি ব্যবস্থা করা হয়েছে যেটা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কোরবানির পশুর বাজার যেন রাস্তার পাশে না বসে সে জন্য সব ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবং আইনশৃংখলা বাহিনীকে এ বিষয়ে নজরদারী রাখার জন্য বলা হয়েছে। আর করোনা সংক্রমণ এড়াতে বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করার ব্যবস্থা করা হবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads