• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
শেয়ালের মাংসের ভোজ!

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

বাউফলে পরিবেশবাদি সংগঠনের ক্ষোভ

শেয়ালের মাংসের ভোজ!

  • বাউফল প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ আগস্ট ২০২০

মুখরোচক। পুরানো বাত-ব্যাথা দূর হয় শরীরের। করোনায়ও আছে উপকার। তাই ১৬ যুবকের শেয়ালের মাংস দিয়ে রুটি ভোজের উৎসব। এ উপলক্ষে চাঁদাও দিতে হয়েছে উৎসবে অংশ নেয়া প্রত্যেককে। জনপ্রতি ২০ টাকা হারে দিতে হয়েছে তাদের।

এ ঘটনা মঙ্গলবার রাতে পটুয়াখালীর বাউফলের বৌলতলী চৌরাস্তা এলাকার। তবে অবলা বন্যপ্রাণি জবাই করে কাটাকুটি এবং রুটি বানিয়ে উৎসব করে ওই শেয়ালের গোস্তে রুটি ভোজ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে স্থানীয় পরিবেশবাদি সংগঠনের লোকজনসহ সচেতন মহলে।

জানা গেছে, বর্ষার পানিতে বিল-ঝিল সয়লাব হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে কনকদিয়া ইউনিয়নের বৌলতলী চৌরাস্তা এলাকায় কয়েক যুবকের হাতে ধরা পরে একটি খেকশেয়াল। করোনায় শেয়ালের গোস্তে আছে উপকার। শেয়ালের গোস্ত ভোজে শরীরের পুরানো বাত-ব্যথা ভালো হয় এমন ধারণা আর মুখরোচক হবে জেনে সঙ্গবন্ধ হয় স্থানীয় ১৬ যুবক। তারা জবাই করে দেয় অবলা বন্যপ্রাণি ওই বিপর্যস্ত শিয়ালটিকে। অনেকে উৎসাহ নিয়ে দেখতে আসেন শেয়াল জবাইয়ের খবর শুনে কাটাকুটি দেখতে। কাটাকুটি শেষে ওই রাতেই রান্না করে হয় ভোজের আয়োজন। শিয়ালের গোস্ত খাওয়ার জন্য চাঁদা তোলা হয় জনপ্রতি ২০ টাকা করে। স্থানীয় মজিদ মৃধা বাড়িতে হয় রান্না ও রুটি তাপানো। আয়োজনের খবর পেয়ে গেলে খেকশিয়ালের গোস্তে রুটি ভোজের ওই উৎসবে যোগদেন স্থানীয় আরো কয়েকজন। সব মিলে ২৫-৩০ জন ওই গোস্ত-রুটি ভোজের উৎসবে অংশ নেয়।
রাজীব নামে এক যুবক বলেন, ‘বিকাল ৫ টার দিকে ধরা হয় শিয়ালটি। স্থানীয় মুরব্বিদের মাঝে বন্ধমূল আছে শেয়ালের মাংসে শরীরের বাত-ব্যথা ভালো হয়। তাই আমরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে এটি রান্না করে রুটি দিয়ে খেয়েছি। মাংসের স্বাদও ভালো।’

শিয়ালের গোস্তা রান্না করা বাবুর্চি আবু তাহের বলেন, ‘সাত কেজি আটায় ১০০ রুটি বানানো হয়। অনেক উৎসাহ নিয়েই শিয়াল রান্না করে মাংস-রুটি খেয়েছি। খুব ভালোই লেগেছে খেতে।’
এদিকে শেয়ালের গোস্তে রুটি ভোজে বিরুপ সমালোচনায় এসেছে ওই যুবকরা। সচেতন মহলের কেউ কেউ ভোজে অংশ নেয়া সকলের দৃষ্টন্তমূলক সান্তি দাবিও করেছেন। অবলা এই বন্যপ্রাণির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’ নামে স্থানীয় পরিবেশবাদি সংগঠনের পরিচালক মন্ডলির একজন প্রবাসী কামরুজ্জামান বলেন, ‘করোনা মহামারি কালে মানুষের ঘরবন্দি দশায় শব্দ, বায়ূ ও পানি দুষণসহ বিভিন্ন ধরণের রেডিয়েশন কমে বন্যপ্রাণীরা কিছুটা স্বাচ্ছন্দ পায়। উপকুলীয় প্রাণ-বৈচিত্রে পরিবর্তণের ভিন্ন সারা মেলে। এ সময় বৈশ^য়িক আবহাওয়া পরিবর্তণে উপকুলীয় অঞ্চলে বিরুপ প্রভাবের শিক্ষা নেওয়া উচিত। কিন্তু বাদ-বিচার না করে অবলা খেকশিয়ালের ওপর হামলে পড়ে জবাই করে গোস্ত-রুটি ভোজের মতো এমন নিষ্ঠুর আচরণের বিচার হওয়া দরকার। মানুষ হয়ে মহামারির এই সময়েও আচরণে পরিবর্তণ না আনলে ওরা দিন দিন হিংস্র সব বন্যপ্রাণির চেয়েও ভবিষ্যতে খারাপ আচরণ করবে।’

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা অঞ্চলের মোহাম্মদ মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ূ পরিবর্তণের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় হুমকীতে থাকা উপকূলীয় বিভিন্ন বন্য প্রাণীসহ চরাঞ্চলের পাখপাখালি করোনার লকডাউনে স্বাচ্ছন্দ ফিরে পেয়েছিল। এদের খাদ্যাভ্যাস, চলাচল, প্রজননসহ জীবন আচরণেও পরিবর্তণ এসেছে। খেকশিয়ালের মতো অবলা এসব প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতির পরিবর্তে নির্দয় আচরণকারীদের বন্যপ্রাণী রক্ষা আইনে বিচারের আওতায় আনা জরুরী।’

এ ব্যাপারে ওই ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে কারা করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বাউফল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাাফিজুর রহমান বলেন, ‘বন্যপ্রাণি আটক করা বা খাওয়া অপরাধ। বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে বন বিভাগ তাদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads