• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কলেজের উন্নয়ন ও চা-নাস্তা খরচের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়

কলেজের উন্নয়ন ও চা-নাস্তা খরচের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

  • রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

সারাদেশে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার পর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে। তবে এই ভর্তি কার্যক্রমে হতে না হতেই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি দুইটি খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি এক হাজার টাকা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী প্রতি কলেজের উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিল, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়, শিক্ষকদের বেতন, ভাঙ্গা ক্লাসরুম মেরামত, ইন্টারনেট বিল সহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে ১১ শত টাকা করে আদায় হয়েছে। আর ভর্তি কার্যক্রমে নিয়োজিত শিক্ষকদের চা-নাস্তা খরচ ও ভর্তি ফরম জন্য আরো আদায় করছেন ১৫০ টাকা করে।

এখানেই শেষ নয় প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হওয়ার আগেই প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার অগ্রিম পরীক্ষার ফিসের জন্য দিতে হয়েছে ৪২০ টাকা করে। সব মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি জন্য মানবিক/ব্যবসায় শাখায় দিতে হয়েছে ২৬৫০ টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ২৯২০ টাকা।

কলেজে ভর্তি শেষে শিক্ষার্থীদের মানবিক/ব্যবসায় শাখায় ২৫২০ টাকার ও বিজ্ঞান শাখায় ২৭২০ টাকার একটি রশিদ দেয়া হলেও উল্লেখ করা হয়নি কোন খাতে কত টাকা নেয়া হয়েছে। আবার ফরম বিক্রি ও চা-নাস্তা খরচের জন্য নেওয়া ১৫০ টাকাও লেখা হয়নি রশিদে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর অভিযোগ অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও জানেন না অগ্রিম পরীক্ষার ফি নেয়ার বিষয়টি।

এবছর একাদশ শ্রেণিতে প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ২৫ জন। এর মাঝে মানবিক শাখায় ৭২৫ টি, ব্যবসায়ী শাখায় ১৫০ টি ও ব্যবসায়ী শাখায় ১৫০ টি আসন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ১৩ থেকে ১৭ ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা ভর্তি কার্যক্রমের ইতিমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হয়েছে মানবিক শাখায় ৭২৩ জন, ব্যবসায়ী শাখায় ৪৫ জন ও বিজ্ঞান শাখায় ৬৭ জন। সব মিলিয়ে ৮৩৫ জন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্ত করেছেন। এই হিসাব অনুযায়ী কলেজের উন্নয়ন খাতে নামে ৯ লক্ষ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা আর ফরম/চা-নাস্তার খরচ ১ লক্ষ ২৫ হাজার ২৫০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৭০ সালে সুসং রাজার বসত বাড়ির এক অংশে সুসং মহাবিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু হয়। কালের বিবর্তনে ও মহান মুক্তিযুদ্ধের পর অত্র এলাকার শিক্ষিত জাতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালের ২৩শে মে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম আরও আধুনিক করতে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারিকরণ করা হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিতে নানা সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে এর আগেও।

এদিকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ রয়েছে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজ ও ডন বস্কো কলেজের বিরুদ্ধেও। আর শুধুমাত্র ভর্তি ফরম বিক্রি করেই শিক্ষার্থী প্রতি ৭০ টাকা করে আদায় করছেন দুর্গাপুরের নবনির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডন বস্কো কলেজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয়ে আগে টাকা জমা দিতে হয় তারপর ভর্তি ফরম দেয়। আগে টাকা না দিলে ভর্তি ফরম তারা দেয় না। তারপর কিসের জন্য এতগুলো টাকা নেয়া হচ্ছে ওইগুলো তারা আমাদের বলেন না। এ নিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলেই শিক্ষকরা ভর্তি হলে হন না হলে না চলে যান এরকম ব্যবহার করে আমাদের সাথে। তার ওপর সারা দেশেই এখন করোনার এক ধরনের আতঙ্ক চলছে। যার জন্য প্রায় ৭ মাসের বেশি সময় ধরে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু এর মাঝেও কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার ফি আদায় করছেন। ছয় মাস পর পরীক্ষা হবে কিনা কিংবা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে কেন গরীব অসহায় পরিবারগুলোর শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অগ্রিম পরীক্ষার ফি সহ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে ।

সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয় অধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান জানান, প্রতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। এ কমিটির সাথে সমন্বয় করে আমরা একটি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছি। সরকারিভাবে এক হাজার টাকা নেয়ার বিধান রয়েছে আমরা তা মেনে চলছি। তবে কলেজে উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে ফান্ডের প্রয়োজন যা আমরা এ ভর্তি কার্যক্রম থেকেই সংগ্রহ করে থাকি। প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা, এবং প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষকদের বেতনও উন্নয়ন ফি থেকেই দেয়া হয়। আর এ বছর আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফিও অগ্রিম আদায় করছি। সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও কলেজের উন্নয়নে সরকার থেকে কোনো বরাদ্দ তেমন একটা আসেনা তাই ভাঙা ক্লাসরুম মেরামত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চা-নাস্তার খরচ সহ বিভিন্ন খরচ অনেক সময় তারা নিজেরা বা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বলেও জানান তিনি।

এই বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান জানান, কলেজগুলোতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো বিধান নেই। তারপরও যারা আদায় করছে তাদের আগেই সতর্ক করেছি। কি কারণে তারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে তার বিধিমালা পর্যালোচনা করা হবে আর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads