• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
আলোর মুখ দেখছে নতুন কালুরঘাট সেতু প্রকল্প

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

আলোর মুখ দেখছে নতুন কালুরঘাট সেতু প্রকল্প

  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

নুরউদ্দীন সাগর, চট্টগ্রাম

 

দক্ষিণ চট্টগ্রামে বসবাসরত মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্প অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রেলপথ সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাথে বৈঠক করে এ খবর নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, সব কিছু শেষ পর্যায়ে অল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। মোসলেম উদ্দিন এই জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রতিদিন ঝুঁকি ও ভোগান্তি মাথায় নিয়ে প্রায় ১ লাখ লোক এভাবে সেতু পারাপার হচ্ছেন। এছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রাম এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল।

দীর্ঘদিন ধরে নতুন কালুরঘাট সেতুর জন্য আন্দোলন করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে সমূহ পাশাপাশি কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের নামে একটি সংগঠন দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে সেতুর নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার ছিল। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। শুধু ১০ বছর ধরে আশার বাণী শুনেছেন তারা।

তবে এবার বহু আকাঙ্ক্ষিত সেতুটি বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে দেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা দক্ষিণ কোরিয়া ও বাকি ৫০০ কোটি সরকার অর্থায়ন করছে। সেতু নির্মাণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তিন বছর।

চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে ১২ সেপ্টেম্বর নগরের সার্কিট হাউজে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন নতুন কালুরঘাট সেতুর নকশা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া এ সেতুর অর্থায়নে দক্ষিণ কোরিয়াও সম্মতি দিয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, যেহেতু অর্থায়ন মিলছে তাই এবার নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ হবেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কালুরঘাট সেতু নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও মতামত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) কাছে পাঠিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ের ওপর মতামত জানতে চেয়েছে।

ইডিসিএফের সিনিয়র লোন অফিসার ইয়েলি কিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে রেলওয়ে কাম রোড ব্রীজ অথবা শুধু রেল সেতু নির্মাণের বিষয়ে রেলওয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সর্বনিম্ন স্ট্যান্ডার্ড নেভিগেশনাল ছাড়পত্র কত হবে, সিঙ্গেল নাকি ডাবল রেললাইন, লেন সংখ্যা, সেতুর টাইপ রেলওয়ে গেজ (সিঙ্গেল/ডাবল), ব্রড গেজ বা মিটার গেজ এবং প্রকল্পের সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয় সম্পর্কে কূটনৈতিক চ্যানেলে বিস্তারিত প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।

এছাড়া নতুন কালুরঘাট সেতুর টেকনিক্যাল বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুটির উচ্চতা নিয়ে আপত্তি। রেলওয়ের প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ মিটার। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ মিটার করার শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

ইতোমধ্যে উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দিলে বিআইডব্লিউটিএ’র সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। তাদের শর্ত পূরণ করে নকশা তৈরির কাজও করছে রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা সেতুটি দুই লাইন করতে চাচ্ছিলাম। দুইটি রেল, দুইটি রোড। কিন্তু এভাবে করলে সেতুটি অনেক বড় হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে দ্য ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড।

তারা সেতুতে একটা রেল আর দুইটি রোড করতে বলেছে। তাহলে সেতুটি একটু ছোট হবে। খরচও কম হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। তাদের পরামর্শ ও আমাদের মতামতগুলো পাঠালেই তারা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে দেবে।

কালুরঘাট বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল মোমেন প্রকল্প বাস্তবায়নে আশা জাগানো অগ্রগতির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং যারা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads