• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
আখাউড়ায় ভালো নেই প্রতিমা তৈরীর শিল্পীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

আখাউড়ায় ভালো নেই প্রতিমা তৈরীর শিল্পীরা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ঘনিয়ে আসছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। সারা দেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পূজামন্ডপগুলোতে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর সাজ সাজ রব নেই পৌরশহরসহ উপজেলার পূজা মন্ডগুলোতে। আগামী ২২ অক্টোবর ঘরে ঘরে দেবীদুর্গার আগমনী বার্তা নিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে কীভাবে হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা সে অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে কাঁদা মাটি কাঁঠ খর ও বাঁশ দিয়ে প্রতিমা তৈরীতে কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরী হচ্ছে এক একটি প্রতিমা। তৈরী করা হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী লক্ষ্মী, কার্তিক গণেশ, অসুর ও শিবের মুর্তি। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই মুর্তিগুলোর কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করছেন। তবে প্রাণঘাতী করোনার কারণে এবার দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটা ম্লান হতে চলেছে। বিগত বছরের পূজার সে চিরচেনা শহর ও গ্রামাঞ্চলে আলোক-সজ্জা, সাংস্কৃতিক ও আনন্দ-বিনোদন অনেকটাই লুকিয়ে থাকবে অগোচরে। সেই সঙ্গে এবারের শারদীয় উৎসবে বাইরে ঘুরতে থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশনা।

উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল গ্রামের প্রতিমা তৈরির কারিগর রতন পাল বলেন, প্রতি বছর এ সময় প্রতিমা তৈরীর ভালো চাহিদা থাকতো। কিন্তু এ বছর প্রাণঘাতী করোনার কারণে তেমন চাহিদা নেই। এ বছর মাত্র ৮টি প্রতিমার কাজ তারা করছেন। গত বছর ১৪ টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেন বলে জানা এক একটি তৈরীতে পেয়েছেন ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এবার কমে গেছে প্রতিমার উচ্চতা আর সাজসজ্জাও। পাশাপাশি কমেছে তাদের মজুরিও।

তিনি আরো বলেন, কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসলেও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। নয়াদিল গ্রামের অন্তত ১৫-২০ টি পরিবার মাটির তৈরি প্রতিমাসহ হাঁড়ি, পাতিল, কলস, গরু, ঘোরা, হাতি, ঢাকনা ও মাটির ব্যাংক ইত্যাদি বানিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিনি আরো বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত হয়ে কাজ করে জীবিকা অর্জন করছেন। পরিবার তার ১ ছেলে ১ মেয়ে ভাইসহ ৭ জন সদস্য রয়েছে। বাংলা নববর্ষ চৈত্র মেলা ও পূজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ঘিরে বছরে ৩ লাখ টাকার উপর আয় হতো। তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সব কিছু পাল্টে দিয়েছে।

রিপন পাল, রতন পাল, সাধন পালসহ একাধিক প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, বাংলা নববর্ষের চৈত্রের মেলা ও দুর্গাপূজা ঘিরে এ মৃৎশিল্পে যে আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের আর্থিক অনেক ক্ষতি হয়েছে, যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। অনেক মালামাল ঘরে পড়ে আছে যা বিক্রি করা যাচ্ছে না।

বিজয় দাস বলেন, মাটির তৈরীর বিভিন্ন জিনিসের স্থানীয় পর্যায়ে বেশ চাহিদা থাকায় এমনিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু দুর্গাপুজা আসলে ব্যস্ততা আরো বেড়ে যেতো। করোনায় চাহিদা কমে যাওয়ায় আয় ও কমেছে।

উপজেলা পুজা উদয্পান কমিটির সদস্য সচিব বিশ্বজিৎ পাল বাবু জানায় আসন্ন দুর্গাপূজার প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা করতে হবে। এ সম্পর্কিত ২৬টি নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকেই এ নির্দেশনা মেনে পূজা করতে হবে। তিনি আরো বলেন পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১৯ টি সার্বজনীন পুজামন্ডপ স্থাপন হবে। এরমধ্যে পৌর শহরে ১০ টি ও উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে ৯ টি পুজা মন্ডপ রয়েছে।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রসুল আহমদ নিজামী বলেন, দুর্গাপুজা হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব । এই উৎসবে কেউ যাতে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। কোন প্রকার যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে সার্বিক সতর্ক রাখা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads