• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
গারো পাহাড়ের পাদদেশে হচ্ছে চা চাষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

গারো পাহাড়ের পাদদেশে হচ্ছে চা চাষ

  • আতাউর রহমান কাজল, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০২০

সিলেট, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ের পর চায়ের চতুর্থ অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে এ অঞ্চল। সূত্র মতে, ১৯৮৪ সালে প্রণীত চা নীতিতে দেশের উত্তরাঞ্চলে ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি এলাকাসমূহে প্রথম চা আবাদের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক সমগ্র বাংলাদেশে চা আবাদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে ১৭টি জেলা বিশেষ করে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলের মধুপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭২ হেক্টর চা চাষযোগ্য জমি চিহ্নিত করা হয় ।

শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, অনেক বছর ধরেই শেরপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে চা চাষের উপযুক্ততা নিয়ে কথা বলে আসছিলেন চা বিশেষজ্ঞরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাসমূহে চা চাষের সম্ভাবনা সরেজমিনে জরিপ করার জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক একটি টিম সরেজমিনে পরিদর্শন, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করে ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারি একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রদান করেন।

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, এই জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাহাড়ি এ জনপদের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া চা চাষাবাদের অত্যন্ত উপযোগী। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট (১১২০ একর); শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী (১১৫০ একর), ঝিনাইগাতি (১৮৫৫ একর) ও নালিতাবাড়ি (২৫০০ একর); জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ (৬০০ একর) ও নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর (১৭৭০ একর) ও কলমাকান্দা (১০৫০ একর) উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৪৫ একর জমিতে চা আবাদ সম্ভব। এছাড়াও পরবর্তীতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় চা আবাদ সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প গ্রহণে বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক গঠিত একটি টিম সরেজমিনে তথ্য উপাত্ত যাচাই করে ২০১৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রদান করে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ময়মসিংহের মুক্তাগাছা (৩০০ একর), ফুলবাড়িয়া (৫০০ একর), ভালুকা (৪০০ একর) ও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর (৬০০ একর), ঘাটাইল (৫০০ একর), সখিপুর (৫০০) অর্থাৎ উক্ত উপজেলাসমূহে

আরো ২ হাজার ৮০০ একর ভূমিতে ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৫টি জেলার ১৫টি উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৬৪৫ একর জমিতে চা আবাদ সম্ভব। ওই জমি চা আবাদের আওতায় আনা হলে বছরে এ অঞ্চল থেকে ১৬.৩৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হবে।

চা বোর্ড সূত্র আরো জানায়, এ অঞ্চলের চা আবাদের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বেশ কিছু স্থানীয় উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। শেরপুর জেলায় চা চাষের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বেসরকারি উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন ফনিক্স এর ‘গারো হিলস টি কোম্পানি’। তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর লোকজনকে এর মধ্যেই চা-চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চা-চাষের লক্ষ্যে এরই মধ্যে স্থানীয় ২৭ জন কৃষকের মাঝে ২৭ হাজার উন্নত জাতের চা চারা বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে চায়ের চারার রোপণ। ইতোমধ্যে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলায় ছয়জন, নালিতাবাড়ি উপজেলায় তিনজন, ঝিনাইগাতি উপজেলায় ১৩জন, নকলা উপজেলায় চারজন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় একজন কৃষক অর্থাৎ মোট ২৭ জন কৃষক ৫.৩১ একর জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন।

এদিকে, ক্ষুদ্র চাষিদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গত ১৭-১৯ অক্টোবর শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি চা বিশেষজ্ঞ টিম বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতি, নকলা ও নালিতাবাড়ি এবং ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় সৃজিত ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানসমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন, চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মাসুদ রানা, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নাঈম মোস্তফা আলী ও সহকারী উন্নয়ন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আকন্দ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads