• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে স্বল্প আয়ের লোকজন

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে স্বল্প আয়ের লোকজন

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০২০

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে থমকে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের জনজীবন। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন স্বল্প আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন ওইসব স্বল্প আয়ের লোকজন। দিন দিন তাদের আয় রোজগার বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তাদের পারিবারিক কষ্ট দুর হতে চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার স্বল্প আয়ের লোকজনের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। তারা এখন অনেকটাই পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ফলে কলকারখানা, অফিস-আদালত, যানবাহন বন্ধ থাকায় শহরসহ গ্রামাঞ্চলের লোকজনের উপর প্রভাব পড়ে। ফলে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে। দৈনন্দিন কাজ-কর্ম ও আয়-রোজগার না থাকায় এসব মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় কাজকর্ম শুরু করেছেন ওই সমস্ত লোকজন। দিন দিন সচল হচ্ছে তাদের অর্থনীতির চাকাও। দিন মজুর, রেস্টুরেন্ট কর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ভাসমান ব্যবসায়ী, চা বিক্রেতা, অটো সিএনজি রিকসা চালক, কৃষক বিদেশ ফেরতসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন কম বেশী আয় করে দিনানিপাত করছেন।

পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার সিএনজি অটো রিকসা চালক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্ত্রী, ১ মেয়ে ১ ছেলেসহ ৪ জনের সংসার। অটো রিকশার আয় দিয়ে চলে তার সংসার। করোনায় প্রায় ৫ মাস তার আয় রোজগার একেবারে বন্ধ ছিল। ঘরে যা সঞ্চয় ছিল বসে থেকে সব শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় তার। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় সিএনজি অটো রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৪-৫শ টাকা তার আয় হচ্ছে বলে জানায়। তবে আগের মতো আয় না হলে ও দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

রেলওয়ে স্টেশনে ৩ বছর ধরে চা-বিস্কুট-পাউরুটি-কলা বিক্রি করছেন সোহাগ নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, করোনায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তারও চা-বিস্কুট-পাউরুটি-কলা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। স্ত্রী, ২ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে অনেকটাই কষ্ট করে তার চলতে হয়। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় পুনরায় তার বিক্রি শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগে যেখানে দৈনিক ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা বিক্রি হতো বর্তমানে ৮শ থেকে ১হাজার টাকার উপর বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ অবস্থা থাকবে না আয় রোজগার বেড়ে যাবে।

সড়ক বাজার মোটর স্ট্যান্ড এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (পান সিগারেট বিক্রেতা) সুবল চন্দ্র দাস বলেন তার পরিবারে স্ত্রী, ২ ছেলে ১ মেয়েসহ ৫ জন সদস্য রয়েছে। ওই ক্ষুদ্র ব্যবসার আয় দিয়ে চলে তার এই সংসার। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়লে ও বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় তার বেচা কিনা বৃদ্ধি পাওয়ায় তার কষ্ট অনেকটাই দুর হয়েছে।

চা বিক্রেতা হারুন বলেন এক সময় সকাল সন্ধ্যা অন্ত:ত ৪ থেকে ৫শ কাপ চা বিক্রি হতো। সব সময় ছিল মানুষের আনাগুনা। কিন্তু করোনায় বাজারে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় চা বিক্রি ও এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দৈনিক ২ থেকে আড়াইশ কাপ চা বিক্রি করছেন । দিন দিন চায়ের চাহিদা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

ফুটপাতে কলা বিক্রেতা শহীদ বলেন, করোনায় দীর্ঘ দিন কলা বিক্রি বন্ধ ছিল। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টে তার চলতে হয়েছে । বেশ কয়েক দিন ধরে তিনি আবার কলা বিক্রি শুরু করেছেন। আয়-রোজগার ভালো হওয়ায় মাথা থেকে বড় চিন্তা দুর হয়েছে বলে জানায়।

পত্রিকা বিক্রেতা (হকার) মো. শাহআলম বলেন করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে পত্রিকা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । তার আয় রোজগার একেবারে কমে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় এখন পত্রিকা বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রেন নির্ভর সুমন, ইয়াছিন,ফারুকসহ একাধিক ভ্রাম্যমান হকার বলেন, করোনায় ট্রেন বন্ধ থাকায় তাদের ভ্রাম্যমান ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। এখন ট্রেন চলাচল করলেও যাত্রীরা বুট,বাদম, চানাচুর, গাজারসহ বিভিন্ন রকমের খাবার তেমন বেশী খেতে চায় না। তবে দিন দিন অনেক পরিবর্তন হচ্ছে চাহিদা বাড়ছে। আগে যেখানে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা বিক্রি হতো এখন ৬-৭শ টাকা হচ্ছে।

রিকশা চালক আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লোকজন হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত করছে। পরিবহনের কদর বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনিক আয় ও বাড়ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads