• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জাহাজের ধাক্কা সামলাতে পারছে না সেন্টমার্টিন জেটি!

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

জাহাজের ধাক্কা সামলাতে পারছে না সেন্টমার্টিন জেটি!

  • জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ
  • প্রকাশিত ০৫ নভেম্বর ২০২০

ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের স্বপ্নের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপে ভ্রমণকারী পর্যটকদের যাতাযাতের একমাত্র জেটি অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত জেটি সংস্কার না হওয়ায় জোয়ারের প্রবল ঢেউতে জেটির অধিকাংশ খুঁটি নষ্ট হয়ে পড়েছে। এছাড়া পর্যটন মৌসুমে অপরিকল্পিত জাহাজ ভেড়ানো বা ৭/৮ টি জাহাজের ধাক্কায় জেটির সম্মূখ অংশ ভেঙ্গে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে এটি সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে চলতি পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের ভোগান্তি চরমে উঠবে। পাশাপাশি দ্বীপে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খুঁটির আবরন খসে পড়ে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, রড ছাড়া আর কিছুই নেই। পর্যটক যাতায়াত শুরু হলেই যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। 

সুত্রে জানা যায়, দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ ‘সেন্টমার্টিনের একমাত্র জেটি নির্মিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। সারা বছর দেশি বিদেশি পর্যটক বিভিন্নভাবে আসা যাওয়া করলেও বিশেষ করে শীত মওসুমে দ্বীপে ভ্রমণে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। তাদের ওঠানামার সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছিল এই জেটি। নির্মাণের কয়েক বছরের মাথায় জাহাজের ধাক্কায় ও প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে পল্টুনে ভাঙ্গন দেখা দেয়। মেরামতের জন্য টেন্ডারের খবর শোনা গেলেও তা দীর্ঘ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। এখন জেটিটি  দিয়ে পর্যটক ওঠানামা করা নিরাপদ নয়। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই টেকনাফস্থ দমদমিয়া ঘাট থেকে ৮/৯টি পর্যটকবাহী জাহাঁজ চলাচল করে থাকে। এর বাইরেও ডিংগি নৌকা, স্পিড বোট দিয়ে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত থাকে সারা বছর। অপরিকল্পিত জাহাজ ভেড়া ও ধাক্কায় জেটিতে ভাঙ্গন লেগেছে বলে মনে করেন সচেতনরা।

জেটি পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেটি সংস্কারের ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান জেটি ইজারাদার কক্সবাজার জেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনকে অনেকবার অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে দিনদিন জেটিটি অতি ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে। এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর আহমদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জেটি পুনঃসংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ কয়েক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর সংস্কারের অনুমতি প্রদানে বিলম্ব করছে। যার কারণে জেটি সংস্কারে বিলম্ব হচ্ছে। এদিকে ১০ নভেম্বর পর্যটক আসা যাওয়া শুরু হবে বলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। জাহাজ চলাচল শুরু হলে এই ঝুঁকিপূর্ণ জেটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক উঠানামা করবে। এসময় জেটির ধারন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত চাপ বেড়ে যাবে। অন্যদিকে ৮/৯টি পর্যটকবাহী জাহাঁজ প্রতিদিন প্রচন্ড ঢেউ নিয়ে ওই জেটিতে ভিড়বে। এতে আরো জেটি অত্যান্ত ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়বে। যে কোন মুহূর্তে জেটি ভেংগে প্রাণহানি ও অঙ্গহানির মত বড় ধরনের দূঘটনা হতে পারে বলে সচেতন মহলের অভিমত। এই ঝুঁকিপূর্ণ জেটি সংস্কার বিষয়ে পর্যটকের ঢল না নামার আগেই অনতিবিলম্বে পুনঃসংস্কারের দাবী পর্যটক ও স্থানীয়দের। 

কক্সবাজার থেকে একমাত্র পর্যটকবাহী জাহাঁজ “এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস” করে সেন্টমার্টিনে ভ্রমনে আসা ঢাকার কেরানী গঞ্জের বাসিন্দা আলমগীর লিটন জানান, অনেক উৎসাহ, উদ্দীপনায় সেন্টমার্টিন বেড়াতে আসলেও জেটিতে নামতেই আতংকিত হয়ে পড়ি। কারণ এই জেটি দিয়ে একসাথে হাজারো মানুষ উঠানামা করছে। এতে জেটিটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যটক জানান, এই ঝুঁকিপূর্ণ জেটি যতদিন সংস্কার হবেনা ততদিন এ দ্বীপে জীবনেও ভ্রমণে আসবো না। তিনি আরো জানান, ঢাকা হতে একটি ভিআইপি কাফেলা ভ্রমণে আসার পরিকল্পনা থাকায় তাকে আগেই থেকে দেখতে পাঠিয়েছেন। তারা সেন্টমার্টিন আসার পরিকল্পনা থাকলেও সরেজমিন পরিদর্শন করে তা বাতিল করতে পরামর্শ দেব।

দ্বীপে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের স্বার্থ বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে দক্ষ প্রকৌশলীর সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক পর্যটকের ঢল নামার আগেই সংস্কার করার জোর দাবি জানিয়েছেন দ্বীপবাসী।

এই বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান, বিষযটি জেলা পরিষদের। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads