• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
'এখন আর কোন বাধা নেই, তাই মনের আনন্দে খেলা করছি'

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

'এখন আর কোন বাধা নেই, তাই মনের আনন্দে খেলা করছি'

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২৪ জানুয়ারি ২০২১

ছোট্র শিশু সুমাইয়া জাহান রশনি ও পরিমনি। তারা মনের আনন্দে নিজ বাড়ির সামনে খেলা করছে। আগে খেলতে গেলে তাদের অনেক বাধা বিপত্তি থাকতো। ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা খেলাধুলা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত ছিল। এখন আর যেন তাদের সেই বাধা নেই। তারা এখন মুক্তমনে স্বাধীন ভাবে খেলা করছেন।

সুমাইয়া জাহান রশনি উপজেলা মোগড়া ইউনিয়নের মোগড়া বাজার এলাকায় সালেহা খাতুন দাখিল মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ও পরিমনি ওই ইউপির ধাতুরপহেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছেন। তারা জানায়, তাদের কোন স্থায়ী বসতঘর ছিল না। তাদের পিতা মাতা অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাড়ি ঘরও ছিল ভাঙ্গাচুরা। থাকতে খুবই কষ্ট হতো তাদের। বাড়িওয়ালার ছেলে মেয়েসহ আশপাশের ছেলে মেয়েরো সব সময় খেলাধুলা করত। কিন্তু আমরা গরিব অসহায় হওয়ায় তারা আমাদের সাথে মিশতো না। এমন কি বাড়ির উঠানে খেলতে গেলেই বাড়িওয়ালা বাধা দিতেন । তখন খুবই কষ্ট হতো। দুর থেকে শুধু দেখতাম তারা যে খেলা করে। আমাদের এই কষ্ট দেখে মা বাবা দেখে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এখন আর কেউ আমাদেরকে বাধা ও গালমন্দ করতে পারবেনা। তাই মনের আনন্দে খেলা করছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর গ্রামে সরকারিভাবে বাড়ি পেয়েছে তাদের পরিবার। সেই বাড়ির সামনে রয়েছে তাদের খেলার জায়গাও। আছে তাদের অনেক খেলার সাথীও। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৪৫টি পরিবার তাদের স্বপ্নের ঠিকানা পেয়েছে। উপকারভোগী প্রত্যেক পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের বাড়ির দলিলও। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে গৃহ প্রদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্ধোধন করার পর তাদেরকে ওইসব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
রোববার চরনারায়ণপুর স্বপ্ননীড়ে কথা হয় সুমাইয়া জাহান রশনি ও পরিমনির সঙ্গে। দুজনই প্রতিবেশী। তারা স্বপ্ননীড়ের সামনে মনের আনন্দে খেলা করছিল। তারা নিজেদের বাড়ি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। সেইসাথে তাদের খুশিতে হাসি ফুটেছে বাবা-মায়ের মুখেও।

আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে সুমাইয়া জাহান রশনি জানায়, আমরা গরিব বলে সবাই অবহেলা করত। কেউ তার সঙ্গে মিশতে ও খেলতে চাইত না। অন্যের বাড়িতে খেলাধুলা করতে দিত না। সরাক্ষণ বাড়িতে বসে থাকতে হতো।

পরিমনি বলেন বাড়িতে এক প্রকার গৃহবন্দি ছিলাম। বাড়ির আশপাশের লোকজন মিশতো না। চাচার বাড়িতে গেলে চাচা-চাচিও তাকে তাড়িয়ে দিতেন। তাদের সন্তানদেরকে আমাদের সাথে খেলতে দিত না। সব সময় বকাবকি করতো। এখন সরকার আমাদেরকে বাড়ি দিয়েছে। এখন আর তার খেলায় কোনো বাধা নেই। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

পরিমণির বাবা লিটন মিয়া বলেন, উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের তুলাবাড়ি গ্রামে তাদের বাড়ি। পৈতৃকভাবে পাওয়া আধা শতাংশ জায়গা ছিল। কিন্তু সেই জায়গাটুকুও ভাইয়েরা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বাড়ির পাশে একটি ঘরভাড়া নিয়ে থাকতাম। সেই ঘরটিও ছিল ভাঙ্গাচুরা। থাকার মতো কোন অবস্থা ছিল না। বর্ষাকালে ঘরে পানি পড়তো। আর শীতকালে হিমেল হাওয়ায় ঘরে ঘুমাতে পারতাম না। তিনি আরো বলেন ঝালমুড়ি বিক্রি করে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতাম। অনেক সময় ঘরভাড়া দিতে পারতাম না। সেজন্য বাড়িওয়ালা অনেক কথা শুনাতেন, ঘর ছেড়ে দিতে বলতেন। আমার মেয়েটাকে কেউ খেলায় নিত না। বাবা হিসেবে মেয়ের এই কষ্টে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। সন্তানদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে পারছিলাম না। আমি পাকা ঘরে থাকতে পারবে কখনো কল্পনাও করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন পুরন করেছে এ জন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়। তিনি বলেন আমার মাথায় যত চুল আছে আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করেন।

সুমাইয়া জাহান রশনির মা রহিমা আক্তার বলেন তার স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। সামান্য আয়ের তাদের সংসার । ভাঙ্গাচুরা ঘরে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিনানিপাত করতো। শীতের সময় ঘর ভাঙ্গা চুরা থাকায় রাতে খুবই কষ্ট হতো। তাছাড়া বৃষ্টির সময় সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরে বৃষ্টি পড়ায় খুবই কষ্ট করতে হয়। গরিব বলে সবাই অবজ্ঞা করতো। তাদের সন্তানদের সাথে অন্যকারো সন্তাররা মিশতো না। একপ্রকার সব সময় গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হতো। চলা ফেরা থাকা খুবই কষ্টকর ছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি আরও বলে কোনদিন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটা পাকা ঘর দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলে সে অনুযায়ী তিনি গরিবদের দিকে তাকিয়েছেন। আমাদেরকে মাথাগুচার ঠাঁই করে দিয়েছে। আজ আর আমাদের কোন বাধা নেই। সন্তানরা নিজেদের মতো করে চলতে পারছে এটা যে কী আনন্দ সেটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। তিনি আমাকে বাড়ি করে দিয়ে আমার সব কষ্ট দূর করেছেন।

বিধবা মাজেদা বেগম বলেন, তার ১ ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাওয়া যেতো তাই দিয়ে তার জীবন চালাতে হতো। থাকার মতো কোন ঘর ছিল না। অন্যের বাড়িতে ভাঙ্গাচুরা ঘরে থাকতে হতো। বর্ষাকালে ঘরে পানি পড়তো। আর শীতকালে হিমেল হাওয়ায় ঘরে ঘুমাতে পারতাম না। জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি পাকা ঘরে থাকতে পারবে কখনো কল্পনাও করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন পুরন করেছে। তিনি আরও বলেন আমার মাথায় যত চুল আছে আল্লাহ যেন তাকে নেক হায়াত দান করে এবং সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে-এ আলমের সার্বিক তত্বাবধানে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চর নারায়নপুর মৌজায় সরকারি খাস জমিতে ৪৫টি পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হয়।

প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য থাকছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এসব ঘর। চৌচালা বিশিষ্ট রঙিন টিনের ঘর , প্লেন শিটের জানালা, ও দরজা, ইটের দেয়াল,এবং পাকা মেজ রয়েছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সবগুলো বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় করা হচ্ছে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট, টিউবওয়েল, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads