এ জগৎসংসারে জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন জীবিকার। জীবিকা নির্বাহের জন্য ছুটে চলে দিবারাত্রি দেশ থেকে দেশান্তরে। সে সময় প্রতিবন্ধী শিশু তারেকের দৈনিক প্রত্যাশা ছোট ভাই-বোন, মা-বাবার আহারের একশ টাকার খাদ্য। তারেক সরিষাবাড়ী উপজেলার যমুনা বিধৌত নদীভাঙন কবলিত এলাকা পিংনা ইউনিয়নের গোপালগঞ্চ হাটখোলা রোগাক্রান্ত মোফাজ্জল হোসেনের (৫৫) প্রথম সন্তান। তারেক (১৬) জন্ম থেকেই মানসিক, শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। সংসারে রয়েছে আনুমানিক ১৪ বছরের ছোট বোন, প্রথম শ্রেণিতে পডুয়া ছোট ভাই ও রোগাক্রান্ত মা-বাবা। তারেকের পরিবার যমুনা নদীর বেড়িবাঁধের ওপর নানার বাড়িতে বসবাস করলেও রোগাক্রান্ত দিনমজুর বাবা সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ ও বিভিন্ন জনের সহায়তায় ফসলের মাঠের মাঝে তিন শতাংশ জমি ক্রয় করে ছোট একটি জীর্ণঘর তুলে সবাইকে নিয়ে বসবাস করছে। কর্মহীন বাবার সংসার চালাতে অক্ষম হওয়ায় বড় ছেলে হিসেবে দায়ভার আসে তারেকের ওপর। তারেকের না আছে কোনো কাজ করার সামর্থ্য, না আছে ভিক্ষা করার মানসিকতা। দুই বছর ধরে জেলার বৃহৎ গো-হাটের হাট বিটার হিসেবে দায়িত্ব নেন পিংনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক। তারেকের শুরু হয় দৈনিক একশ টাকার আবদার। তারেক সকালে উঠেই ইউনিয়ন যুবলীগের কার্যালয়ে অবস্থান নেন- কখন আসবে সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক। তিনি এলেই চাহিদা ১০০ টাকা। প্রতিদিন তারেক ১০০ টাকা নিয়েই ছুটে যায় বাজারে ক্রয় করে সাধ্যমতো আটা কিংবা চাল। মাঝে মধ্যে ২০০ টাকার আবদারে যোগ হয় কিছু কাঁচা বাজার। বাজার করেই তারেক ছুটে চলে বাড়িতে আপাতত দিনের চাহিদা শেষ।
তারেকের মা বলেন, কর্মহীন রোগাক্রান্ত স্বামী সংসার নিয়ে বিপাকে রয়েছি। তারেক প্রতিদিনই কিছু আটা কিংবা চাল আনে, আর আমি আন্যের বাসায় কাজ করে সারাদিন যা রোজগার করি- তাই দিয়ে সংসার চালানো খুবকষ্ট হয়।
সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, দুই বছর ধরে আমি অফিসে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারেকের আবদার ১০০টাকা। যা দিয়ে তারেক তার পরিবারের জন্য কিছু খাবার কিনে নিয়ে যায়। তাই আমি প্রতিদিন তারেকের জন্য ২০০টাকা আলাদা করে রাখি। আমি বাড়িতে গিয়ে দেখেছি তারেকের পাঁচ সদস্যের পরিবার সবাই মিলে ছোট একটা জীর্ণঘরে থাকে।