• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
অস্তিত্ব সংকটে ‘মুণ্ডারা’

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

অস্তিত্ব সংকটে ‘মুণ্ডারা’

  • কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০২১

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর উপজেলায় আদিবাসী মুন্ডাদের বসবাস। গত ২৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করেছেন তারা। এলাকায় তারা সুন্দরবনের আদিবাসী ‘মুণ্ডা’ সম্প্রদায় নামেই পরিচিত। আদি নিবাস ভারতের ঝাড়খণ্ড ও রাচি এলাকায়। এদেশে আসা মুণ্ডাদের রয়েছে স্বতন্ত্র ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার মানুষ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা হারিয়ে এখন অস্তিত্ব সংকটে। বাপ-দাদার বাদাকাটা (বনের গাছকাটা) পেশা হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। ফলে তারা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

সুন্দরবন আদিবাসী মুণ্ডা সংস্থার (সামস) দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে শ্যামনগরে মুণ্ডাদের ৪২০টি পরিবারের জনসংখ্যা ২ হাজার ৭৪০। এসব পরিবারের ৯৫ শতাংশ ভূমিহীন। অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অভাবকে পুঁজি করে ভূমিদস্যুরা তাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে চার শতাধিক পরিবারের মধ্যে তিনজন গ্রাম পুলিশ এবং ১৩ জন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। অন্য সদস্যরা দিন মজুরের কাজ করেন।

প্রতিকূল পরিবেশে কঠোর পরিশ্রম করতে পারে এই সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসকরা সমতল ভূমির বনজঙ্গল কেটে কৃষি উপযোগী করাসহ পরিচ্ছন্ন হাট-বাজার ও নগর গড়ে তোলার কাজে তাদের নিয়ে আসে এদেশে। এক সময় তাদের সুন্দরবনের গাছ কেটে জনবসতি গড়ার কাজে লাগানো হয়। সময়ের আবর্তে মুণ্ডা সম্প্রদায়ের পেশার সঙ্গে কাজের ধরনও বদলে যায়। এরপর থেকেই তারা এ অঞ্চলের বিভিন্ন নদীর পাশে বসতি গড়ে তোলেন। বর্তমানে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কালিঞ্চি, ভেটখালী, তারানিপুর, সাপখালী, ধুমঘাট, মুন্সিগঞ্জ, কাশিপুর, কচুখালী এলাকায় নদীর তীরে সরকারি খাস জমিতে বাস করে আদিবাসী মুণ্ডারা। আগে তাদের প্রধান জীবিকা ছিল সুন্দরবনের গাছ কাটা, নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ। বর্তমানে তাদের অনেকেই আদি পেশা ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুণ্ডা বলেন, বাঙালিদের সঙ্গে লেখাপড়ার কারণে নিজেদের ভাষা ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় মুণ্ডারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চাও করতে পারছে না। মুণ্ডাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্যারামমুরা নাট্য গোষ্ঠীর পরিচালক গোপাল চন্দ্র মুণ্ডা বলেন, মুণ্ডারী ধর্মের অনুসারী মুণ্ডাদের প্রধান উৎসব করম পূজা। বাংলা ভাদ্র মাসের একাদশি তিথিতে এই উৎসব হয়। মুণ্ডাদের নিজস্ব ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রধান ধারক ও বাহক বন্দনা নৃত্য।

স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য ডালিম কুমার ঘরামি বলেন, বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য জেলা পরিষদ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তবে তা অপর্যাপ্ত। বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে জানিয়েছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads