• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
অযত্ন-অবহেলায় শহীদ বেলালের স্মৃতিচিহ্ন

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

অযত্ন-অবহেলায় শহীদ বেলালের স্মৃতিচিহ্ন

  • মশিউর রহমান, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০২১

অযত্নে অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে উপজেলার কান্দারপাড়া এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধে নিহত শহীদ বেলাল হোসেনের স্মৃতিচিহ্ন। শহীদ বেলালের যুদ্ধসঙ্গী এবং সেই যুদ্ধে আহত হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের ২৬ তারিখে আনুমানিক সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের সময় জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীস্থ বর্তমানে যমুনা সারকারখানা সংলগ্ন তারাকান্দি এরিয়ায় যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী কোম্পানি কমান্ডার প্রয়াত রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি ইউনিট চার ভাগে বিভক্ত হয়ে বসির ডাক্তার বাড়ি, মাঝি বাড়ি, সফিউল্লা ডাক্তার বাড়ি এরিয়ায় ও কান্দারপাড়া বাজারে অবস্থান নেয়া হয়। কান্দারপাড়া বাজার এলাকায় যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানস্থল দূর্বাঘাসে আচ্ছন্ন ছিল, এর পূর্বপাশে ধানের বীজতলা, দক্ষিণ ও উত্তর পাশে ছিল পাটক্ষেত। তখন পাট কাটার উপযোগী হয়েছিল। আমরা ওই ঘাসের মধ্যেই পরিখা/মরিচা খনন করে পজিশন নিয়েছিলাম। আাামি আব্দুল মান্নান, বেলাল হোসেন, আমজাত হোসেন, ইউসুফ আলী, জামাল উদ্দিন ও হাবিবুর রহমান একযোগে (বর্তমানে শহীদ বেলাল নগর) দুর্ধর্ষ পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাদের (মুক্তিবাহিনী) প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়, যা মুহূর্তের মধ্যেই ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধে পরিণত হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র ৩০ গজ। যুদ্ধ চলাকালীন আমজাদ হোসেনের হাতে থাকা এলএমজি বিকল হওয়ার পর বুদ্ধি খাটিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে অনবরত বলতে থাকেন আলফা কোম্পানি ডানদিক থেকে অ্যাডভান্স, বিটা কোম্পানি বাঁমদিক থেকে অ্যাডভান্স- এ কমান্ড আমাদের যেমনি সাহস জুগিয়েছে তেমনি পাকিসৈন্যদের মনে ভীতি সঞ্চার করেছে। সেখানে পাক বাহিনীর পাঁচজন এবং মুক্তিবাহিনীর আমি, বেলাল ও আমজাত আহত হই। পরে বেলালকে হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে হত্যা করে সেই স্থানে। ওই সময়ে বাংলাদেশের এত ভেতরে পাক বাহিনীর সঙ্গে এমন ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধ আর কোথাও সংঘটিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

১৯৭১ সালে সেই স্থানটি কোম্পানি কমান্ডার প্রয়াত রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রক্তে রঞ্জিত স্থানটি ১০/১২ ফুট ব্যাসার্ধের সমপরিমাণ জায়গা ইটা দিয়ে ঘেরাও করে একটি শহীদ মিনার চিহ্নিত করেন ১৯৭২ সালে। আমি পাশেই পোগলদিঘা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মনে রেখাপাত করে প্রবলভাবে। ফলশ্রুতিতে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আমার শ্রদ্ধেয় স্যার প্রধান শিক্ষক প্রয়াত মুজিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে খালি পায়ে হেঁটে ওখানে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন অন্যান্য শিক্ষকসহ ছাত্রছাত্রীরা। আজ শহীদ মিনারের সেই দেয়ালটি ভেঙে ছোট্ট বেসের উপর ছোট্ট এবং সরু তিনটি পিলার করা হয়েছে, যা সামান্য একটু দূর থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads