• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
গৌরনদীতে সরকারি ওষুধ পাচার

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

গৌরনদীতে সরকারি ওষুধ পাচার

  • গৌরনদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০২১

সরকারি হাসপাতালের বস্তাভর্তি ওষুধ পাচারের ভিডিও ও ছবি তোলায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে আটকে রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার। ঘটনাটি গত শনিবার দিবাগত রাতে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটেছে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে অন্যান্য সংবাদকর্মীরা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় সংবাদকর্মীদের ফেসবুক লাইভে বিষয়টি দেখে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শত শত এলাকাবাসী জড়ো হয়ে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইউএনও’র সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস পুরো ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রাত একটার দিকে উত্তেজিত এলাকাবাসীকে শান্ত করেন।

জানা গেছে, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা হাসপাতালের পাশের নির্জনস্থানে বিপুল পরিমাণ ওষুধ পোড়ানো ও পাচারের খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন মিয়া, খোকন আহম্মেদ হীরা, কাজী আল আমীন, মোল্লা ফারুক হাসান, হাসান মাহমুদ ও আরিফিন রিয়াদসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় সংবাদকর্মীরা দেখতে পান কয়েকটি বস্তাভর্তি সরকারি ওষুধ হাসপাতাল থেকে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাজেদুল কাওসার ও স্টোর কিপার সাইদুর রহমান, স্টাফ আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ বহিরাগত আরো ৪/৫ জন সহযোগীরা। সংবাদকর্মীরা এসব কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে ডা. মাজেদুল কাওসার ও তার সহযোগীরা পাচারের উদ্দেশ্যে নেওয়া ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদের বেশ কিছু সরকারি ওষুধ ফেলে পালিয়ে যায়। কিছুসময় পর সংবাদকর্মীরা হাসপাতাল ত্যাগ করতে গিয়ে দেখতে পায় হাসপাতালের দুইটি গেট তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন অবরুদ্ধ সংবাদকর্মীরা। ইউএনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে থাকেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত সাড়ে দশটার দিকে তালা খুলে দেয়ার পর অবরুদ্ধ সংবাদকর্মীরা মুক্ত হন। পরে ইউএনও’র নির্দেশে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ার্টারের বাসা, বাসার পাশের ঝোপজঙ্গল থেকে বস্তা ও কার্টুন ভর্তি পাচারকরা সরকারি ওষুধ ও ইনজেকশন জব্দ করেন, যার প্রত্যেকটির মেয়াদ রয়েছে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, স্টোর কিপার ডেট ওভার কিছু ওষুধ পুড়িয়ে ফেলেছে। বস্তাভর্তি পাচারকরা (ডেট থাকা) সরকারি ওষুধ উদ্ধার এবং সাংবাদিকদের অবরুব্ধ করে রাখার ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাজেদুল কাওসার পুরো ঘটনার দায়ভার স্টোর কিপার সাইদুল ইসলামের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে নির্দোষ সাজানোর চেষ্টা করেন। তবে সাংবাদিকদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে তার (মাজেদুল কাওসার) উপস্থিতি থাকার ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সংবাদকর্মীদের অবরুদ্ধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বেশকিছু সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। যার অধিকাংশরই ডেট রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক তদন্তে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত ৮টা ২৩ মিনিটের সময় হাসপাতাল থেকে অসংখ্য ওষুধের কার্টন ট্রলি ভর্তি করে বাইরে নেওয়া হচ্ছে। পুরো ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করার পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে- তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads