• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বৃদ্ধা হালিমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন ইউএনও-ওসি

শতবর্ষী বৃদ্ধা হালিমাকে হুইল চেয়ার এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হস্তান্তর করেছে ইউএনও রাফিউল আলম এবং ওসি আজিম উদ্দিন।

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

বৃদ্ধা হালিমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন ইউএনও-ওসি

  • ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০২১

শত বছর বয়সী বৃদ্ধা হালিমা। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার শৌলা গ্রামের রজ্জব আলীর স্ত্রী সে। প্রায় ১০ বছর আগে তার স্বামী রজ্জব আলী মারা গিয়েছে। রজ্জব আলীর প্রথম স্ত্রী ছিলেন হালিমা। তবে সন্তান প্রসবে অক্ষম হওয়ায় তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে। বৃদ্ধা হালিমার সতীন একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে মারা যায়। সেই থেকে সতীনের মেয়েকে নিজের কোলে আগলে বড় করেছেন হালিমা। এরপর তার স্বামী তৃতীয় বিয়ে করে। তার তৃতীয় সতীনও একটি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যায়। এর পর থেকে দুই সতীতের দুই ছেলে মেয়ের মায়ের অভাব পূরণ করেছে হালিমা।

আজ হালিমার বয়স ১০০। ভ্যানচালক ছেলে এবং দিনমজুর মেয়ের জামাই চাইলেও হালিমার সকল ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনা। গত ১৯ সালে কিডনি জনিত সমস্যায় পড়ে হালিমা। পাশাপাশি বয়সের ভারে বিছানায় পরে যায় হালিমা। কখন ছেলের ঘর। আবার কখন মেয়ে জামাইয়ের ঘরে দিন কাটে বৃদ্ধা হালিমার। শেষ বয়সে শান্তিতের মাথা গোজার নির্দিষ্ট ঠাঁই নেই তার।

বয়সের ভারে নূইয়ে পরা এবং অগণিত শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত বৃদ্ধা হালিমার শেষ ইচ্ছা মাথা গোজার একটি ঘর এবং চলাফেরা করার মত একটি হুইল চেয়ার। অবশেষে তার সেই শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম এবং ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে শতবর্ষী বৃদ্ধা হালিমার বাড়িতে গিয়ে তাকে একটি সরকারি বরাদ্দের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জায়গা নির্ধারণ এবং বৃদ্ধা হালিমা এবং তার মেয়ের জামাইয়ের নামে পৃথক দুটি অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড হস্তান্তর করেছেন ইউএনও রাফিউল আলম।

অপর দিকে বৃদ্ধার চলাচলের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটি হুইল চেয়ার বৃদ্ধা হালিমার হাতে তুলে দিয়েছেন ওসি আজিম উদ্দিন। এছাড়াও বৃদ্ধা যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন ওসি তাকে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

বৃদ্ধা হালিমার মেয়ে তহুরা বেগম বলেন, দিন এনে দিন খেয়ে আমাদের সংসার চলে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও মায়ের অনেক ইচ্ছা আমরা পূরণ করতে পারিনা। আমাদের গর্ভধারিণী মাকে নিজের চোখে দেখিনি। তবে আমার এই মা আমাকে আসল মায়ের অভাব কোনদিন বুঝতে দেয়নি। আমার মায়ের অনেক দিনের ইচ্ছা সে হুইল চেয়ারে চড়ে ঘুরবে। তবে আমাদের সামর্থ্য না থাকায় আমরা কিনে দিতে পারিনি। অবশেষে আমাদের থানার ওসি আমার মাকে একটি হুইল চেয়ার উপহার দিলেন।

এ সময় ইউএনও এবং ওসির সাথে উপস্থিত ছিলেন, ১নং বুলাকিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান লাভলু, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল, ঘোড়াঘাট থানার উপ-পরিদর্শক দুলু মিয়া এবং খুরশীদ আলম।

প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বৃদ্ধ হালিমা কে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় তার সৎ ছেলে আতিয়ার রহমান। এরপর স্থানীয় সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার ছাপ্পু জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করে ঘোড়াঘাট থানায় বিষয়টি অবহিত করলে ঘোড়াঘাট থানার ওসি আজিম উদ্দিন গভীর রাতে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় বৃদ্ধা হালিমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে এবং তাকে সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করার জোর চেষ্টা চালান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads